হাসান আরিফ : সংগ্রাম ও সৃজনের পরিপূর্ণ শিল্পী
আমাদের একজন আরিফ ভাই ছিলেন। তাকে চিরবিদায় জানালাম। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে রেখে এলাম। কিন্তু সত্যিই কী বিদায় জানাতে পারবো এ পরম বন্ধু আর ভীষণ ভালোবাসার মানুষকে?
আমাদের অনেকেরই মন খারাপ জমা রাখার কুঠুরি এই অনন্য মানুষটি। তার সময়ের, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কৃতিকর্মীর বহুজনের এক একটি করে নিজস্ব আরিফ বা আরিফ ভাই ছিলেন। যারা যেকোনো সময় কষ্টে, বিপদে আরিফ ভাইয়ের কাছে আশ্রয় পেতেন, পেতেন সহযোগিতা। আমরা প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে শূন্য হলাম।
হাসান আরিফ একজন সংস্কৃতিকর্মী, আবৃত্তিশিল্পী, নির্দেশক একথা দেশের মানুষ জানেন। তার উদাত্ত কণ্ঠে নিজের ভঙ্গি ও বাচনে আবৃত্তি আমাদের কানে বাজবে আজীবন। যে আবৃত্তিশিল্পীরা তার সাহচর্য পেয়েছেন, পেয়েছেন তার আদর শাসনে বাচিক শিল্পের শিক্ষা তারা তাদের গুরুর বচন মনে রাখবেন চিরজীবন। সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে হাসান আরিফের অগণিত শিষ্য। সারাদেশের বহু আবৃত্তি দল তার নির্দেশনায় কাজ করেছে। প্রতিটি দলের কনিষ্ঠতম সদস্যও পেয়েছেন তার স্নেহ ও মনোযোগ। প্রত্যেকের নাম ধরে ডাকতে পারার অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তার।
কত মানুষের ঘরের খবর, মনের খবর রাখতেন আরিফ ভাই। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানো বিশাল মানুষটির মানবিক মনটির কথা জানতেন কাছের মানুষেরা। কার চিকিৎসা দরকার। কোথায় চিকিৎসা করালে ভালো হবে। ভারতে চিকিৎসা করাতে যাবেন কেউ, আরিফ ভাই তার ত্রাতা। ডাক্তার যোগাযোগ, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কোথায় থাকবে সব আরিফ ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে। কার ওষুধ আনাতে হবে তার ব্যবস্থাও করবেন আরিফ ভাই।
শিশুদের সাথে হাসান আরিফের সখ্য ছিল অনবদ্য। পরিবারে ভাইয়ের ও বোনের কন্যাদের বন্ধু ও আবদারের জন ছিলেন তিনি। বোন তুলির দুই কন্যার আদরের মামুবাবা ছিলেন তিনি। একবার আমাদের স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তাসের দেশ’ মঞ্চস্থ করার সময় আমারই অনুরোধে অংশগ্রহণকারীদের বাচিক প্রশিক্ষণ দেন হাসান আরিফ। প্রায় ২৫ দিন প্রতিদিন শিশুদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- না ফেরার দেশে
- স্মরণ
- হাসান আরিফ