সমুদ্রতটে একা আওয়ামী লীগ
ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। যেভাবেই হোক আমেরিকা টেনেটুনে রাশিয়াকে যুদ্ধে নামতে বাধ্য করেছে। আমার ঘরের প্রতিবেশী হয়ে আপনি আমাকে নিত্য সকালে ধমকাবেন, অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনাবেন, আর আমি কিছু করব না, তা তো হয় না। অন্যদিকে, বাংলাদেশে চলছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। সরকার একজন ভালো এবং নিরপেক্ষ লোককেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল ভালো এবং নিরপেক্ষ লোক। কিন্তু বিএনপি তাকেও মানবে বলে মনে হয় না। বিএনপি দেশে ক্রমাগত অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। আর আওয়ামী লীগ চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে, তা তো হয় না। আওয়ামী লীগকে দেশের অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য ক্ষমতায় থেকে যতটুকু করা দরকার, তা করতে হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য যেমন রাশিয়ার ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানো হবে, এটা তো স্বাভাবিক।
তাই কী নিয়ে লিখব ভাবছিলাম। ইউক্রেন না বাংলাদেশ? ইউক্রেনে যে যুদ্ধটা চলছে তাকে প্রচার করা হচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ। আসলে যুদ্ধটা হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে। আমেরিকা সেখানে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে নামেনি, কিন্তু তার ইউরোপিয়ান মিত্র ও ন্যাটোকে নামিয়েছে। ন্যাটো ব্যাপক অস্ত্র সাহায্য দিয়েছে ইউক্রেনকে। অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থনৈতিক অবরোধ চলছে। পরিণামে কী হবে বলা শক্ত। আমার প্রার্থনা, ইউক্রেনে আমেরিকার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হোক এবং ইউক্রেনের মানুষ স্বস্তিপূর্ণভাবে আবার রাশিয়ার মিত্রে পরিণত হোক।
বাংলাদেশে গতবারের সাধারণ নির্বাচনের সময় আমেরিকা কলকাঠি নাড়তে চেয়েছিল, পারেনি। কারণ, ভারত দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশে আমেরিকাকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়নি। এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। ভারত সরকারের সমর্থন এবার আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তেমন নেই। চীন বাংলাদেশকে প্রচুর আর্থিক সাহায্য দিয়ে দ্রুত উন্নয়নের কাজ এগিয়ে দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে যখন সম্প্রতি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, 'এই বিপুল সাহায্যদান কীভাবে ঠেকানো যায়?' তখন তিনি বলেছেন, 'আমরা কী করব? চীন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালছে।' এভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনৈতিকসুলভ কথা বলেননি। কিন্তু বাংলাদেশের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে চীনের অতিরিক্ত অর্থলগ্নিতে ভারত রুষ্ট। শেখ হাসিনা এতদিন তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দিয়ে আমেরিকা এবং চীন দুটি পরাশক্তিকেই বাংলাদেশের মিত্র করে রাখতে পেরেছিলেন। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়েছে, এই ক্যারিশমা কতটা কাজে লাগবে তা জানি না। তবে আমার ধারণা, শেখ হাসিনাই পারবেন এই আবর্ত থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে উভয় পরাশক্তির সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রাখতে।