ও গঙ্গা, তুমি বইছ কেন
গঙ্গায় ভেসে আসছে লাশ। নদীর পাড়ে লাশের সারি। বাতাসে লাশের গন্ধ। কুকুর আর কাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে মানুষের মরদেহ। উড়ে এসেছে শকুনও। গত মে মাসে ভারতে করোনা মহামারির এমন ভয়াবহতা গোটা বিশ্বকে নাড়া দেয়। ভারতীয় পুরাণে যে গঙ্গা পবিত্র ও শুদ্ধতার প্রতীক, সেই গঙ্গাই হয়ে ওঠে লাশের নদী। যে জলধারায় স্নান করে পুণ্য অর্জন করে সনাতনধর্মী মানুষ, সেটি হয়ে পড়ে দূষিত। ভোরের সূর্যপ্রণামের মধ্য দিয়ে গঙ্গাস্নান শেষে যে মানুষ আজীবন তার দিন শুরু করে গেছে, গঙ্গার ঘাটে বসে সে-ই হয়তো চোখের পানি ঝরিয়েছে।
করোনায় ভারতে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেল। আদতে কত মানুষ দেশটিতে করোনায় মারা গেল সেই প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসিতে ভারতীয় সাংবাদিক রুমকিনি এস বলছেন, করোনা মোকাবিলায় সফলতার চিত্র তুলে ধরতে মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানোর জন্য শুরু থেকে ‘মিথ্যার আশ্রয়’ নিয়েছে বিজেপি সরকার। সেই কৌশলে সরকারি পরিসংখ্যানে আটকে যায় এপ্রিল-মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় মৃত্যুর ভয়াবহতা। সেসময় মধ্যপ্রদেশে সব ধরনের মৃত্যুর মোট হার স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত এই মৃত্যুহার ছিল করোনায় মৃত্যুর সরকারি হিসাবের চল্লিশ গুণ। একইভাবে উত্তর প্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশেও করোনায় মৃত্যুর হার কম দেখানো হয়েছে। রুমকিনির মতো ভারতের অনেক সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট উচ্চারণে করোনা নিয়ে দেশটির সরকারের ‘মিথ্যাচারের’ বিষয়টি তুলে ধরছেন। পবিত্র গঙ্গার পাড়জুড়ে কান্নার আহাজারিও কিন্তু সেই সাক্ষ্য দেয়।