ছবি সংগৃহীত

মেনোপজের সময়ে...

sraboni zaman
লেখক
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০১৩, ১৩:০৯
আপডেট: ১২ জুন ২০১৩, ১৩:০৯

একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রতিটি মহিলারই নিয়মিত মাসিক চক্র বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মেনোপজ বলে। পুরুষদের যৌন ক্ষমতা নিঃশেষিত হবার পর তেমন কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা দেখা দেয় না, কিন্তু মাসিক বন্ধ হবার পর অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় মহিলাদের মাঝে। যদিও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে একজন নারীর যৌন ক্ষমতা ফুরিয়ে যাওয়া নয়। তবে এটার অর্থ এই যে তাঁর শরীর আর নতুন ডিম্বাণু সরবরাহ করতে পারবে না। অর্থাৎ স্বাভাবিক উপায়ে তিনি আর সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না। সুতরাং বলা যায় যে সাধারণত ৪০ হতে ৫৫- এই বয়স সীমার মাঝে বা কাছাকাছি কোনও সময়ে যদি টানা ১২ মাস মেনসট্রুয়েশন বা পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তবে তাকেই মেনোপজ বলা যাবে। এটা একটি স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবি জৈবিক ঘটনা। অর্থাৎ প্রত্যেক নারীর শরীরবৃত্তীয় চক্রে এই সময়টি উপস্থিত হবেই হবে। মেনোপজের কিছু সময় আগে থেকেই মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করে। সেই সাথে দেখা দিতে শুরু করে নানান রকম শারীরিক সমস্যা। মেনোপজের আগে ও পরে কি ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে যদি আগে থেকে সচেতন থাকা যায় তা হলে সহজেই ভালো থাকা সম্ভব।

মেনোপজ আসলে কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে কোন রকম রোগ ব্যাধি ছাড়াই মহিলাদের ঋতুস্রাব স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়াকে মেনোপজ বলা হয়। সাধারানত ৪৫-৫৫ বছরের সীমা রেখার মাঝে মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর গর্ভাশয়ের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়,ফলে ঋতু চক্র বন্ধ হয়ে যায় এবং নারী প্রজনন ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।

কেন হয় মেনোপজ?

জন্মের পর একজন মেয়ে শিশুর ডিম্বাশয়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ ডিম্বাণু থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ ডিম্বাণুই নষ্ট হয়ে যায়। একজন নারীর সারা জীবনে প্রায় ৫০০ ডিম্বাণু পূর্ণতা লাভ করে এবং একজন সুস্থ নারীর সাধারনত ১২-১৩ বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়ে যায়। ১৩ বছরের পর থেকে প্রতি মাসে (২৮ দিনের চক্রে) একটি ডিম্বাণু পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং নানান রকম শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঘটতে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে এই পরিণত ডিম্বাণুটির নিষেক না ঘটলে মৃত ডিম্বাণু রক্তক্ষরণের সাথে নির্গত হয়ে যায় শরীর হতে, আর সেই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকেই মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ এবং আমাদের শরীরের অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়াগুলিকে পরিষ্কার রাখার উপায়। প্রতি মাসিক চক্রের ২৮ দিনে একটি ডিম্বাণু নির্গমনের ফলের ৪৫-৫০ বছর বয়সের ভেতরই প্রায় সব ডিম্বাণু শেষ হয়ে যায়,সেই সঙ্গে এস্ট্রোজেন উৎপন্নও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাসিক হালকা ও অনিয়মিত হতে থাকে ও এক সময় মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

মেনোপজকালীন নানান শারীরিক সমস্যা -

একজন মহিলার মেনোপজকালীন সময়ে নানান ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সে সমস্যা গুলো সাময়িক। একটু সময় ও ডাক্তারের পরামর্শ মতন চললেই মানিয়ে নেয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেয়া যাক-
  • মেনোপজ হবার পর হট ফ্ল্যাশ নামক সমস্যাটি সব চাইতে বেশি লক্ষ্য করা যায়। হট ফ্ল্যাশ হলে কান ও মাথা হঠাৎ গরম হয়ে যায়,সঙ্গে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এর জন্য সাধারনত কোন ওষুধের দরকার হয় না। মেনোপজ শুরু হবার ১-২ বছরের মধ্যে এই সমস্যা সেরে যায়। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
  • মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করতে পারে,অনেক সময় বুকে চিনচিনে ব্যাথাও অনুভূত হয়।
  • হজমে নানা সমস্যা দেখা দেয়,পেট ফাঁপতে পারে ও খিদে কমে যায়।
  • অনেক সময় মাথা ব্যাথা করে,হাতে পায়ে ঝিন ঝিন, কানে পি পি জাতীয় আওয়াজ হতে পারে।
  • কোলোজেনের পরিমান কমে যাওয়ায় মুখের ত্বক পাতলা হয়ে যায়। চামড়ার টানটান ভাব কমে গিয়ে ত্বকের লাবণ্য কমে যায়।
  • শরীরে চর্বির পরিমান বেড়ে যায় ,ফলে শরীর মেদবহুল হয়ে যায়। কাঁধ ও কোমর অধিক মোটা হয়ে যেতে পারে।
  • স্তন ছোট ও সংকুচিত হয়ে যায়। অনেক সময় স্তনে হালকা ব্যাথা হতে পারে।
  • শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমান কমে যাওয়ায় হাড় ক্ষয় হয়, ফলে কোমর ও হাঁটুতে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। চলা ফেরা করতে অসুবিধা হয়।
  • মেনোপজের পর যৌন ইচ্ছা কমে যায়। অনেক সময় আবার উল্টোটাও হতে পারে,অর্থাৎ যৌন ইচ্ছা বেড়েও যেতে পারে।
  • মেনোপজের পর মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়,দ্রুত রাগ হবার প্রবনতাও লক্ষ্য করা যায়।

মেনোপজের পরও ভাল থাকুন -

মেনোপজের পরের সমস্যা গুলোর জন্য সাধারনত কোন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। একটু সচেতন হলেই আপনি নিজেই এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হতে পারবেন। দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়ায় কিছু পরিবর্তন আনুন। লবন খাওয়া কমিয়ে দিন। বেশি ভাজাভুজি ও তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন,গরু ও খাসির মাংস কম খান। এর বদলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুতা সময় হাঁটুন , সম্ভব হলে হালকা ব্যায়াম করুন। সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করুন,জীবন সঙ্গীর সাথে বেশি সময় কাটান। মেনোপজ ব্যাপারটিকে সহজ ভাবে গ্রহন করুন, কেননা আপনার সমবয়সী সকল নারীর জীবনেই এটা ঘটছে। যদি মেনোপেজের পর হঠাৎ করে একটানা রক্ত ক্ষরণ বা সাদা স্রাব দেখা দেয় বা কোমরে ও তল পেটে বেশি ব্যাথা হয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । মেনোপেজ সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে রাখুন ও তৈরি থাকুন মেনোপেজ পরবর্তী সমস্যা গুলো মোকাবেলার জন্য ।