
ছবি সংগৃহীত
স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় এসেনশিয়াল অয়েল
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৩, ০৬:০৭
এসেনশিয়াল অয়েল হচ্ছে সুগন্ধী ভেষজ তেল। গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন ফুল, পাতা, শেকড়ের নির্যাস ইত্যাদি থেকে এসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয়। গাছের নির্যাস থেকে তৈরি হওয়ায় এই তেল যেমন সুগন্ধী হয়, তেমনি ওষধিগুণ সমৃদ্ধও হয়। ফলে মন ও শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে এসব তেল। এসেনশিয়াল অয়েল যদিও প্রাকৃতিক সুরভীযুক্ত, তবুও পারফিউম বা আর্টিফিশিয়াল ফ্র্যাগরেন্স অয়েল আর এসেনশিয়াল অয়েল কিন্তু এক নয়। এসেনশিয়াল অয়েল অ্যারোমা থেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সুন্দর গন্ধ পুরো পরিবেশকেই আমূল পালটে দেয়। ফুলদানীর সুগন্ধী ফুল, এয়ার ফ্রেশনার, পারফিউমের সৌরভ বা লিপস্টিকের ফ্লেভার - সবই কিন্তু মানসিকতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। এখানেই এসেনশিয়াল অয়েলের গুরুত্ব। সুগন্ধীযুক্ত এই তেল মানসিক শ্রান্তি দূর করে ও ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করে। ইতিবাচক অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় মনে ও সারা শরীরে। এই কারণে মাসাজ থেরাপি বা স্পার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়। এসেনশিয়াল অয়েলের ব্যবহার : শীত, গরম ইত্যাদি ঋতু অনুযায়ী এসেনশিয়াল অয়েলের ব্যবহারে রকমফের দেখা যায়। শীতে যেহেতু ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি এবং আবহাওয়াও শুষ্ক থাকে, তাই এই সময়ে উষ্ণ ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলই উপযুক্ত। যেমন - ক্লোভ বাড, জিঞ্জার, রোজমেরি, সিনামন, নাটমেগ ইত্যাদি। গরমের সময় হালকা এবং ঠান্ডা এসেনশিয়াল অয়েল উপযুক্ত। যেমন - বেসিল, মিন্ট, ল্যাভেন্ডার, লাইম ইত্যাদি। হালকা ও সুগন্ধীযুক্ত তেল আপনাকে রাখবে গরমেও সতেজ। সব সময়ের জন্য সাইট্রাস তেল বেশ উপকারী। এসেনশিয়াল অয়েল শুধু কখনো ব্যবহার করবেন না। তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন। মাসাজের জন্য বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারেন অ্যারোমাথেরাপি মাসাজ অয়েল। সুইট আমন্ড অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা আপনার পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মাসাজ অয়েল! তারপর এটা দিয়ে বডি মাসাজ করে গোসল করে ফেলুন। দেখবেন কত সতেজ লাগছে নিজেকে! ১০০ মিলি যেকোনো প্রেসড অয়েলের সাথে ১৫ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। আপনি চাইলে একই সাথে কয়েক ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এসেনশিয়াল অয়েল বডি মাসাজের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন ফেসপ্যাকেও। টোনার, ময়েশ্চারাইজার, স্ক্রাবার বা ফেসমাস্কের সাথেও ব্যবহার করতে পারেন সব ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। ক্ল্যারি স্যাজ বা জেরানিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ময়েশ্চারাইজারের সাথে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন। বলিরেখা দূর হবে। চোখের ক্লান্তি দূর করার জন্য চোখে কখনো এসেনশিয়াল অয়েল লাগাবেন না। চোখের ক্লান্তি দূর করার জন্য চামেলি বা রোজ টি ব্যাগ ঠান্ডা বা উষ্ণ (শীত বা গরমের উপর নির্ভর করে) পানিতে ডুবিয়ে চোখের পাতার ওপরে রাখুন। কয়েক মিনিটে ক্লান্তি উধাও হয়ে যাবে। ত্বকভেদে তেলের ধরন : শুষ্ক ত্বক : শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী জেসমিন, রোজ, ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল। তৈলাক্ত ত্বক : তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযোগী হলো চন্দন, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, মিন্ট ইত্যাদি এসেনশিয়াল অয়েল। মিশ্র ত্বক : রোজ উড বা রোজ জেরানিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল মিশ্র ত্বকের জন্য আদর্শ। তবে সব ধরনের ত্বকের জন্য এবং সব ঋতুর জন্য আদর্শ হলো ল্যাভেন্ডার অয়েল। কোন তেলে কী উপকার : *ইউক্যালিপটাস ও উইন্টারগ্রিন অয়েল মাংস পেশির ব্যথা ও সর্দিভাব কমায়। *ল্যাভেন্ডার অয়েল মানসিক শান্তি বজায় রাখে। ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। *লেমন, অরেঞ্জ ও অন্যান্য সাইট্রাস অয়েল মন ভালো রাখে ও মেজাজ ফুরফুরে করে। *রোজমেরি অয়েল প্রশান্তি দেয়। *পেপারমিন্ট অয়েল হজমে সাহায্য করে এবং বমিভাব দূর করে। *জেসমিন অয়েল বিষণ্নতা দূর করে। *সিনামন অয়েল ক্লান্তি দূর করতে এবং পেশির শিথিলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। *রোজ অয়েল রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে। ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। এসেনশিয়াল অয়েল স্বাস্থ্য ও ত্বকের সুরক্ষায় অত্যন্ত উপকারী হলেও লক্ষ্য রাখুন - *প্রথমে সামান্য এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের ওপর লাগিয়ে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা পরও যদি কোনো দানাদানা বা ইরিটেশন না হয় তাহলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। *নানা রকমের সুগন্ধীযুক্ত কসমেটিক বাজারে রয়েছে। সবই যে থেরাপির কাজ করবে, তা নয়। *অভিজ্ঞ থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। আপনার ত্বকের ধরন ও শরীরের ধরন অনুযায়ী কোন এসেনশিয়াল অয়েল আপনার জন্য উপযুক্ত, সে ব্যাপারে জেনে নিন।\ *বিশেষ কোনো অ্যালার্জি থাকলে তা অবশ্যই থেরাপিস্টকে জানাবেন। *এমন অয়েলই ব্যবহার করুন যার গন্ধে আপনি স্বচ্ছন্দ। ভালো না লাগলে নতুন কিছু ট্রাই করতে যাবেন না। *টক্সিক এসেনশিয়াল অয়েল এড়িয়ে চলুন। *তাপ এবং আলোতে এসেনশিয়াল অয়েলের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। গাঢ় রঙের কাচের বোতলে ঠান্ডা জায়গায় এসেনশিয়াল অয়েল সংরক্ষণ করুন। প্লাস্টিকের বোতলে রাখবেন না, নষ্ট হয়ে যাবে। কোথায় পাবেন কসমেটিকের দোকানগুলোতেই পেয়ে যাবেন নানা ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। বিশেষ করে বিউটি পার্লার ও স্পার প্রোডাক্ট যেসব দোকানে পাওয়া যায় যেসব দোকানগুলোতে। হোমিওপ্যাথি ও হারবাল প্রোডাক্টের দোকানেও পাবেন এসেনশিয়াল অয়েল। তেলের ধরনের ওপর নির্ভর করে এর দাম।