ছবি সংগৃহীত

ভ্রমণপিয়াসীদের ভীড়ে মুখরিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক', অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

রোকুনুজ্জামান সেলিম
লেখক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:৩৬
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:৩৬

শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় পোড়াগাঁও ইউনিয়নে স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক'। এবারের শীত মৌসুমে ভ্রমণপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই পার্কটি। এই পার্কের চারপাশে উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলা আর সবুজের সমারোহ দেখতে ইকোপার্কটিতে এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন। নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারিভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এ পার্কে পর্যটকরা ভীড় জমিয়ে আসছেন।

মধুটিলা ইকোপার্কে মৎস্যকন্যার মূর্তি
এই পার্কটির প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু’পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ি ঢালু রাস্তা। এরপরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য । পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর স্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহন করলেই নজর কেড়ে নেয় উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। সীমান্তের ওপারে থাকা ভারতের পাহাড়ও চোখে পড়ে। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণপিয়াসীরা। পার্কটির পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দেখা যাবে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অনেক কিছু। দেখা মিলবে তুরা পাহাড়ের, যেখানে মেঘের বেলা ঢাকা পরে আছে গাছপালা। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ চার হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেস্ট হাউজ। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতির পশু পাখির ভাষ্কর্য। আরও আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য্য বর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ নানান রঙের গোলাপের বাগান।
মধুটিলা ইকোপার্কে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার

যাতায়াত ব্যবস্থা

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাসের পাশাপাশি রয়েছে সিএনজি, ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল, রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এ ছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মোটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। অথবা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সাড়া বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীদের ভীড় লেগেই থাকে।

থাকার ব্যবস্থা

মধুটিলা ইকোপর্কে রাত্রি যাপনের কোন সুব্যবস্থা না থাকলেও মাত্র ৩০ কি.মি দূরে জেলা শহরে রয়েছে থাকার সু-ব্যবস্থা। জেলা শহরে প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে সাধারণদের জন্যেও রয়েছে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস। তবে মধুটিলা ইকোপর্কে দিনের বেলাতে রেস্ট নিতে রয়েছে চারিদিকে সবুজ ঘেরানো পাহাড়ের চূড়ায় একটি ‘রেস্ট হাউজ’।

অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

তবে এত কিছু থাকার ভীড়েও রয়েছে অনেক সমস্যা। সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকার অর্থ ব্যয় করছে না। তিনানি টেংরা খালী থেকে নন্নী বাজার হয়ে পার্ক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণ, ১টি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ পার্কটি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তা কর্মী রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মধুটিলা ইকোপার্কে রেস্ট হাউজ
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইকোপার্কটি জীববৈচিত্র ও বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার ঘটিয়ে যেভাবে সাজানোর কথা ছিল এখনও তার কিছুই হয়নি। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে সম্ভাবনাময় ইকোপার্কটির সম্ভাবনা ম্লান হতে বসেছে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বারবার এ পার্কে ছুটে আসে। বিনোদন ও পাহাড়ি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পার্কটি বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সম্ভাবনাময় এ পার্কটির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আকন্দ বলেন, বিশাল এ পার্কটির নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ১ জন ফরেস্টার, ২ জন গার্ড ও ২ জন মালি। রেস্ট হাউজ থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হলেও এর পরিচ্ছন্নতার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দূরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে।