ছবি সংগৃহীত

ভ্রমণপিয়াসীদের ভিড় বাড়ছে শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কে

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৭:০১
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৭:০১

ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। ছবি: প্রিয়.কম

(সানী ইসলাম, শেরপুর)  প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু-পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ি ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাস্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। স্টারব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চূঁড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ ভ্রমণপিয়াসীরা। প্রকৃতির এই বর্ণিল আয়োজন শেরপুরের নালিতাবাড়ী  উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে।

এবারের শীত মৌসুমে ভ্রমণপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী এই ইকোপার্কটি। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চলতি শীত মৌসুমে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবার হাজার হাজার দর্শনার্থী সমবেত হয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফরে মিলিত হয়ে অপার আনন্দ নিয়ে ফিরে যান নিজগৃহে।

শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার, নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বিটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারিভাবে বিগত ২০০০ সালে নির্মিত হয় এই ইকাপার্কটি।

ইকোপার্কের প্রধান গেইটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলী প্রিয়.কম-কে জানান, চলতি বছরে ১৫ লক্ষাধিক টাকায় ইকোপার্কটি ইজারা নিয়েছেন তিনি। আর ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা ইজারা পেয়েছেন তিনি। তার দাবি, পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হলে দর্শনার্থী আরো বাড়বে, বাড়বে রাজস্ব আয়ও।
তবে তিনি জানান, ভ্রমণপিয়াসীদের পানীয় জলের সমস্যা রয়ে গেছে। এই সংকট নিরসন আর ভাস্কর্য ও স্থাপনাগুলোতে রং করা গেলে লাঘব হবে বেড়াতে আসা লোকজনের কষ্ট। তবে সমস্যা রয়েছে সীমান্ত বেড়া না থাকারও।

ময়মনসিংহের ফুলপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির দর্শনার্থী মাহবুব হাসান জানান, ইকোপার্কের সীমানা প্রাচীর বা কাঁটা তারের বেড়া না থাকায় উত্তর দিকে ঘুরতে গিয়ে প্রায় ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তখন স্থানীয় লোকজন তাকে সহায়তা করে পার্কে ফেরত পাঠান।

তিনি বলেন, এই পার্কের নিরাপত্তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সীমানা প্রাচীর বা বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করা প্রয়োজন।

অপর দর্শনার্থী জামালপুর জেলার তুলশীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুয়েল রানা বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে খুব ভাল লাগল। যদি কৃত্রিমতা বাদ দিয়ে এই পার্কে জীবন্ত প্রাণীর সমাহার ঘটানো যেতো তাহলে দর্শনার্থীরা আরো আকৃষ্ট হতো’।
পার্কের প্রধান ফটক, ছবি: প্রিয়.কম

ইজারাদার জানান, ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ টাকা, বড় বাস ৬০০ টাকা, মিনিবাস ৪০০টাকা, মাইক্রোবাস ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে।

শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ ৪ হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূঁড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেস্ট হাউজ। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়।

এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে জীবন্ত হরিন, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান।

মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় করছে না। আমরা মাঝে মাঝেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসছি। এখনো কোনো প্রস্তাবনা পাশ হয়নি।’

সমেশ্চুড়া গ্রামের আয়নাল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘ইকোপার্কটি জীববৈচিত্র ও বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার ঘটিয়ে যেভাবে সাজানোর কথা ছিল এখনও তার কিছুই হয়নি। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে সম্ভাবনাময় ইকোপার্কটির সম্ভাবনা ম্লান হতে বসেছে।’

সীমান্তবর্তী হওয়ায় ইকোপার্ক থেকে ভারতের দূরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এ ছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। অথবা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের ভিড় লেগেই থাকে।