ছবি সংগৃহীত

ফেসবুক "লাইক" নিয়ে কিছু কথা

Shawnchoy.Rahman
লেখক
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৩, ০৫:১৩
আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৩, ০৫:১৩

images ফেসবুকে "লাইক" এখন একটা বিরাট ব্যাপার। স্ট্যাটাস মেসেজ, ছবি, ভিডিও, প্রোফাইল পিকচার ইত্যাদিতে কী পরিমাণ "লাইক" পড়ল বা পড়ল না সেটা নিয়ে প্রায় সবাই চিন্তিত। আবার কোন ব্লগ বা সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনের কোন সংবাদে কতগুলো "লাইক" পড়ল বা কী পরিমাণ শেয়ার হল - সেটা দিয়ে সেই ব্লগপোস্ট বা সংবাদের জনপ্রিয়তাও যাচাই করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ফেসবুকের "লাইক" আজকাল মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে আমরা প্রিয়.কম-এ কিছু প্রতিযোগিতা দেখেছি যেখানে ফেসবুকের "লাইক"-এর ভিত্তিতে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই নূতন সেলেব্রিটি হয়ে উঠছেন আবার পুরনো সেলেব্রিটিরা বা তাঁদের ভক্তবৃন্দ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফেইসবুক পেইজ চালু করছেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট আরো বেশি জনসংযোগ ঘটানোর জন্য ২০১১ সালে ফেসবুক ও টুইটার চালু করেছেন। শুধু তাই নয়, এবছরের এপ্রিল থেকে তিনি তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা সবাইকে জানানোর জন্য নিজস্ব ব্লগও চালু করেছেন। উল্লেখ্য, রাজস্থানে প্রায় ২৫ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছেন যাঁদের অধিকাংশই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। কিন্তু বাঁধ সেধেছেন বিরোধী পক্ষ বিজেপি। বিজেপির জ্যোতি কিরণ অভিযোগ এনেছেন যে, অশোক অর্থের বিনিময়ে ভুয়া "লাইক" কিনেছেন। তাঁর যুক্তি হল, অশোকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ "আপকা মুখ্যমন্ত্রী" জুন মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত লাইক পেয়েছিল ১,৬৯,০৭৭ টি কিন্তু জুন মাসের ৩০ তারিখেই সেটা বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যায় ২,১৪,৬৩৯-এ []। আসলেই কেউ কেউ মুহূর্তেই পেয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার লাইক আবার কেউ কিছুই পাচ্ছে না। আর সেটা যদি হয় পুরষ্কার নির্ধারণের মানদণ্ড তবে তো চিন্তার ব্যাপার। রাজনীতির ব্যাপার হলে তো আরো ভয়ংকর! ফেসবুক "লাইক" নিয়ে কিছু কোম্পানিও গড়ে উঠেছে। এরকমই একটি কোম্পানি হল Purchasefacebooklikes। তারা বিভিন্ন শাখায় "লাইক" বিক্রি করে থাকে যেমন ইউএসএ লাইক, ওয়ার্ল্ডওয়াইড লাইক, ফটো লাইক ইত্যাদি। লাইকের সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে কিছু প্যাকেজও রয়েছে। তাঁরা বলছে, তাঁদের লাইক ভুয়া নয়, তাঁদের লাইক অর্গানিক যেমন -

"In response to an overwhelming response and demand from our clients, PurchaseFacebookLikes provides the necessary statistics your page needs to be able to gain a steady flow of real organic followers in the future."
ইদানীং সবজি, ফল, ডিম সবকিছু অর্গানিক কিনি স্বাস্থ্য-সচেতন হওয়ার কারণে, কিন্তু অর্গানিক ফেসবুক অনুসারীও যে পাওয়া যায় -এই প্রথম জানলাম। যদি গুগলে buy facebook likes and fans লিখে সার্চ দেওয়া যায়, তাহলে অসংখ্য সাইট/কোম্পানি পাওয়া যাবে, যারা নাকি লাইক/ফ্যান বিক্রি করছে। Screenshot_1 Pagedatapro-ও কম যায় না। স্টক মার্কেটের মত তারা প্রকাশ করছে ফেসবুকে লাইক সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের পরিসংখ্যান। যেমন সর্বচ্চো লাইক পাওয়া পেইজ, দিনের সর্বচ্চো লাইক পাওয়া পেইজ, সপ্তাহের সর্বচ্চো লাইক পাওয়া পেইজ, কমেন্ট, শেয়ার, পোস্ট, দেশভিত্তিক ইত্যাদি। ঘুরে আসুন তাদের পেইজটিতে []। Screenshot_2 আবার ধরেন, চোর ধরার জন্য পুলিশও বের হয়ে গিয়েছে। Statuspeople এমনই একটি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যাদের অনেক কাজের একটি কাজ হচ্ছে ভুয়া অনুসারীদের পাকড়াও করা। fake-status-checker ভুয়া লাইক/একাউন্ট বেড়ে যাওয়াতে ফেসবুককেও এদের খুঁজে বের করার কিছুটা দায়িত্ব নিতে হয়েছে। ফেসবুক ২০১২ সালের জুলাই মাসের দিকে বলেছে যে, শতকরা প্রায় ৮.৭ ভাগ অর্থাৎ ৮৩.০৯ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টই ভুয়া যার পরিমাণ মার্চেই ছিল শতকরা ৫ থেকে ৬ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন। এবার বুঝুন কী পরিমাণে ভুয়া একাউন্ট বাড়ছে, সাথে বাড়ছে হয়তবা ভুয়া "লাইক"-ও [] এইসব ভুয়া একাউন্ট যদি "বট (bot)" হিসেবে লাইক/ফ্যান দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে/হয়, তাহলে বুঝুন অবস্থা ! ফেসবুকের নিজস্ব সিস্টেমেও কিন্তু "বাগ" রয়েছে। এটা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন টেক ম্যাগাজিনে প্রকাশ পেয়েছে। ফেসবুক সোশ্যাল প্লাগিইনে রয়েছে বিশাল সমস্যা। যেমন, ধরা যাক আপনি ব্লগে একটা লেখা লিখেছেন। এখন যদি সেই লেখার লিংক ফেসবুক ইমেইল বা প্রাইভেট মেসেজের মাধ্যমে আপনি কাউকে পাঠান, তাহলে প্রাপক আপনার লেখা পড়ুক বা না পড়ুক, যতজনকে আপনি লেখাটা পাঠাবেন, আপনার লেখাটা ঠিক ততটি লাইক পেয়ে যাবে। ৫০০ বন্ধুকে পাঠালে, তারা লাইক করুক বা না করুক, আপনার লেখাটা ৫০০ লাইক পেয়ে যাবে। এবার বুঝুন যে নাকি লাইকের ভিত্তিতে কোন পুরষ্কার জিতে নিল সে কি আসলেই বিজয়ী? আবার অনেক ব্লগপোস্টেই ফেসবুক রিকমেন্ডেশন প্লাগ-ইন থাকে। দেখা গিয়েছে, এই ধরণের একটি ব্লগ/সংবাদ পোস্ট কাউকে ফেসবুক মেসেজের মাধ্যমে পাঠালে, প্রাপক যদি সেই মেসেজটি খোলে বা পড়ে তাহলে রিকমন্ডেশন প্লাগ-ইনটির সংখ্যা বেড়ে যায় ২টি অর্থাৎ আগে ৫৭ থাকলে সেটা হয়ে যায় ৫৯, এমনকি পোস্টটি প্রেরক ও প্রাপক দুজনেরই অপছন্দের হলেও []। Fidel Martinez লাইক নিয়ে চমৎকার একটি আর্টিক্যাল ছাপিয়েছেন। তিনি শিরোনামে লিখেছেন, মৃত্যুও কোনভাবেই ফেসবুক "লাইক" আটকাতে পারবে না। তার আর্টিক্যালে তিনি লিখেছেন, Nicolala নামে একজনের ওয়ালমার্ট (জায়ান্ট সুপারমার্কেট) পেইজে "লাইক" আছে অথচ Nicolala কোনদিনই সেই পেইজে লাইক দেন নাই। আবার মৃত মানুষেরও "লাইক" দেবার ঘটনা ঘটেছে। Fidel ধারণা করছেন যে, ফেসবুক নিজেই হয়তবা ইউজারদের একাউন্ট গোপনে স্ক্যান করছে ও একাউন্ট ব্যবহার করে লাইক দিয়ে যাচ্ছে [] লাইক নিয়ে আরো আছে কাহিনী। যেমন সায়েন্সটেক২৪.কম এর একটি খবরে দেখলাম, "ভারতের মেট্রো শহরে ২০ থেকে ৩০ বছরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারি করে মুখের খুঁত সারানোর প্রবণতা দারুণভাবে বেড়েছে। প্লাস্টিক সার্জারি করা বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের বক্তব্য , ফেসবুকে তাদের ছবিতে সেভাবে লাইক পড়ছে না, তাই এই পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে......ফেসবুক প্রোফাইল ছবি সুন্দর দেখানোর জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা এক যুবতীর মতে, “ফেসবুকে নিজেকে সুন্দর না দেখালে, তার সামাজিক যোগাযোগ বাড়বে না। তা ছাড়া সুন্দর ছবি পোস্ট করা মানে অনেক অনেক সুন্দর পাত্রর কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া”।" [] এই লাইক বা বন্ধুত্ব নিয়ে আবার অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন যে, অমুকের এত সুন্দর জীবন, অমুকেরা এত চমৎকার চমৎকার জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছে, ছবি পোস্ট করছে, সবাই তাদের ভ্যাকেশন ছবিতে লাইক দিচ্ছে, কিন্তু আমি যেতে পারছি না। অমুকের ৫০০ এর বেশি ফ্রেন্ড আছে কিন্তু আমার ৫০ টিও নেই বা অমুকের অনেক সেলেব্রিটির সাথে বন্ধুত্ব আছে কিন্তু আমার নেই। অমুকের মেসেজ এতগুলো লাইক পেল, আমারটা পেল না। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই নূতন একটি টার্মও চলে এসেছে - "Facebook Jealousy"। এই jealousy কিন্তু আবার মেধাবীদের মাঝে বেশি। যেমন Huffingtonpost-এর একটি সংবাদে এসেছিল যে, একটি রিসার্চে দেখা গিয়েছে যারা যত বেশি মেধাবী, তারা তত বেশি ফেসবুক হিংসুটে। রনোকে কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডেনিস ফ্রিডম্যান এ সম্পর্কে বলেছেন,
"It may be that people with high GPAs tend to have a personality type that makes them more prone to jealousy.Students with higher GPAs are often more conscientious, show greater self-control and tend to be perfectionists"
আবার পূর্ববর্তী একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফেসবুকের ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি হিংসুটে। মজার ব্যাপার হল, emoticon সংযুক্ত মেসেজের ক্ষেত্রে আবার পুরুষেরা হিংসুটে [] এই ফেসবুক হিংসা নিয়ে আরো অনেক আশ্চর্য সংবাদ পাওয়া যাবে এখানে []। আবার ফেসবুকে কীভাবে "স্বয়ংক্রিয় লাইক বট (Auto Like Bot)" বানানো যায়, তার নিয়ম কানুনও অনেকেই অনলাইনে বিনা পয়সায় বাতলে দিচ্ছেন । যেমন - এই পেইজটি []। এখন কথা হল, লাইক জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন? এটা তো শুধুই একটা ভার্চুয়াল লাইক, তাছাড়া আবার ভুয়া লাইকও আছে। তারপরেও কথা থেকে যায়, লেখক নিজের পছন্দে লিখেন নাকি পাঠকের পছন্দের জন্য লিখেন? তবে আমরা "লাইক" নিয়ে যত মারামারি কাটাকাটি করবো, ফেসবুক, অন্যান্য কোম্পানি, ও অন্যরা তত বেশি লাভবান হতে থাকবে। সাইদির "কলা/ঘি তত্ত্ব" ততটা প্রচার পায়নি, যতটা প্রচার পেয়েছে শফি হুজুরের "তেঁতুল তত্ত্ব" অতএব ফেসবুক জিন্দাবাদ ! সূত্রঃ ১. http://ibnlive.in.com/news/ashok-gehlots-men-counter-bjp-charges-of-fake-likes-on-facebook/405924-3-239.html ২. http://www.pagedatapro.com/pages/leaderboard/fc/fan_count ৩. http://news.cnet.com/8301-1023_3-57484991-93/facebook-8.7-percent-are-fake-users/ ৪. http://www.businessinsider.com/this-flaw-in-facebook-lets-you-create-as-many-fake-likes-as-you-want-2012-10 ৫. http://www.dailydot.com/business/facebook-death-sponsored-posts-likes/ ৬. http://www.sciencetech24.com/news/3236#.UeLda6K1HXM ৭. http://www.huffingtonpost.co.uk/2013/07/09/facebook-jealously-clever-students_n_3565256.html ৮. http://www.livescience.com/27120-facebook-romantic-jealousy-women.html ৯. http://blogsandwordpress.blogspot.com/2013/03/facebook-auto-like-bot.html