ছবি সংগৃহীত

খাবারে মাছি বসলে কী করবেন?

সাদিয়া ইসলাম
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ০৭:০২
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ০৭:০২

ফটোসোর্স-www.huffingtonpost.com

( প্রিয়.কম ) আমাদের চারপাশে কত রকমের প্রাণীই তো উড়ে বেড়ায়। মৌমাছি, মশা, প্রজাপতি, ঘাসফড়িং- এরকম হাজারটা উড়ন্ত প্রাণীর ভেতরে মশার পর যে প্রাণীটির আনাগোনা আমাদের ঘরে সবচাইতে বেশি লক্ষ্য করা যায় সেটি হচ্ছে মাছি। মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে অভ্যস্ত এই ছোট্ট জীবটি কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট এসে দখল দিয়ে বসে আমাদের খাবার, কাপড়সহ সবধরনের দৈনন্দিন ব্যবহার্যে। তবে খাবারের দিকেই যেন এদের টানটা একটু বেশি থাকে। সুযোগ পেলেই খাবারের ওপর বসে যায় মাছিরা। শুধু কি বসা? এক বসাতেই প্রচুর পরিমাণ জীবাণুও খাবারের ওপর ছড়িয়ে যায় মাছিরা। ধুর, কিছু হবেনা বলে অবশ্য সেই মাছির জীবাণু ছড়ানো খাবারই খেয়ে থাকেন অনেকে। কিন্তু সত্যিই কি কিছু হয়না মাছির জীবাণু ছড়ানো খাবার খেলে? খাবারে মাছি একবার বসলেই কি সেটা ফেলে দেওয়া উচিত? এমন হাজারটা প্রশ্ন জমা হয় সবার মনে। আসুন জেনে নিই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর।

মুসকা ডোমেস্টিকা বা মাছিকে আমরা একনামেই চিনি। খাবার, বিশেষ করে পচা খাবার ও প্রাণীর দিকেই বেশি ঘুরঘুর করতে দেখা যায় একে। আর তাই মাছির শরীরে সবসময়েই নিজস্ব রোগ-জীবাণু ছাড়াও বাইরে থেকে নিয়ে আসা জীবাণু থাকে। জন্মের পর সাধারনত মাত্র একমাস অব্দি বেঁচে থাকে একটি মাছি ( আইফেল সায়েন্স )। আর নিজের এই স্বল্প জীবনকালেই জন্ম দিয়ে যায় কয়েকশ মাছির। একমাসে সাধারনত কয়েকশত ডিম পাড়ে এরা।

নিজেদের শরীরে নানা স্থান থেকে নিয়ে আসা জীবাণুগুলোকেই মানুষের শরীরে ছড়ায় না মাছিরা, সেই সাথে দূষিত করে খাবারকেও। জীবাণু ছড়ানোর পাশাপাশি খাবারের ওপর মলত্যাগ ও বমিও করে তারা। ফলে খুব দ্রুত নোংরা ও বিষাক্ত হয়ে যায় খাবার। ভাবছেন কেবল এতটুকুই? না। এসবের বাইরেও মাছিদের সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে এদের কোন দাঁত থাকেনা ( দি কনভারসেশন )। ফলে দাঁত দিয়ে যে খাবারের কিছুটা অংশ খেয়ে ফেলবে তারা সেটা হয়না। অনেকটা সময় নিয়ে খাবারকে চুষে চুষে তরল হিসেবে নিজেদের ভেতরে নিয়ে নেয় তারা। একবার ভেবে দেখুন তো! একটি মাছি আপনার খাবারের ওপর যদি এক কিংবা দুই মিনিট ধরেও এক নাগাড়ে মলত্যাগ, বমি করে ও খাবারকে চুষতে থাকে তাহলে সত্যিই কি খাবারটি আর নিরাপদ থাকে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে খাবারে মাছি বসলে সেটি মানুষের শরীরে নানা রোগ, যেমন- চোখের সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণ সহ আরো নানারকম পীড়া যেমন- ডায়রিয়া সৃষ্টি করে ( হাফিংটন পোস্ট )

তাহলে কি মাছি বসলেই খাবারকে ফেলে দেবেন? না! সাধারনত মাছি একটুখানি ছোঁয়া খাবারকে নানাভাবে জীবানুযুক্ত করলেও আদতে একজন সুস্থ দেহের মানুষের পক্ষে সে জীবানুটুকুন খুব বেশি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু সমস্যা তখন দেখা যায় যখন অনেকটা ক্ষণ ধরে মাছি খাবারের ওপর বসার সুযোগ পায়। কারণ, তখন কেবল শরীরের সাথে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু নয়, নিজের বমি, মল আর চুষে নেওয়া খাবারের মাধ্যমেই মানুষের জন্যে একটি বড় রকমের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা সৃষ্টি করে মাছি।

শহরে নানারকম ডাস্টবিন ও ময়লাযুক্ত স্থান থেকে মাছির উত্পত্তি হলেও গ্রামে বা শহর থেকে একটু দূরের স্থানে জন্মানে মাছিরা সবচাইতে বেশি ভয়ঙ্কর হয় ( লেডি ফেয়ার )। কারণ, তাদের সাথে মৃত পশু-পাখির একটা সুক্ষ্ণ যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়। তবে শহর হোক কিংবা এর বাইরে, মাছি সবসময়েই মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর। বিশেষ করে যখন গরমকালে মাছির উত্পাত প্রচন্ডরকম বেড়ে যায়। আর তাই মাছি বসে যাওয়ার পর খাবার ফেলে দেওয়ার চাইতে চেষ্টা করুন মাছি যাতে খাবারে একেবারেই না বসতে পারে সেই ব্যবস্থা করার।

জানলা-দরজাতে জাল দিয়ে রাখুন। খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় তাতে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিন। ঢেকে রাখুন সেগুলোকে। এছাড়াও চারপাশের পরিবেশ ও ঘরের ময়লা ফেলার জায়গাগুলোকে পরিষ্কার রাখুন। এই সামান্য কিছু পদক্ষেপই আপনাকে একদম দূরে সরিয়ে রাখতে পারে মাছি নিয়ে করা সব দুঃশ্চিন্তা থেকে।

লিখেছেন

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

ফিচার রাইটার, প্রিয়লাইফ

প্রিয়.কম