রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা ও করণীয়

যুগান্তর শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯

এক নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এ দেশের প্রত্যেক মানুষ তাদের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে এখন, যে বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং ইনসাফের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্যই এত রক্ত, এত জীবন, এত সংগ্রাম, এতটা বিক্ষোভ, বিদ্রোহ এবং গণ-অভ্যুত্থান। কোনোভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।


ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে নৈতিক মূল্যবোধের মারাত্মক অবক্ষয় ঘটেছিল, সামাজিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। বানের জলের মতো কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখল-বেদখলের মচ্ছব ঘটে। আইনের শাসনের অভাবে কারও জানমালের নিরাপত্তা ছিল না। দুর্নীতি ও মাদক সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার-অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার ছিল না, মিথ্যা উন্নয়নের গল্প বলা হতো। হাসপাতালের করিডরে ও ঘরে ঘরে অগণিত অসুস্থ মানুষের আর্তনাদ এবং আদালতের বারান্দায় বারান্দায় বিচারপ্রার্থীদের আর্তনাদ আর পথে-ঘাটে লাখো বেকার ও কর্মহীনদের অসহায়ত্ব আর হাহাকার দেখেও আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করত। বিবেক ও মনুষ্যত্বহীন একদল লুটপাটকারী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও সমাজের অধিপতি বনে গিয়েছিল। একদিকে ক্ষমতা দখলকারী ফ্যাসিস্ট, অন্যদিকে চরিত্র ও বিবেকহীন লুটেরা মুৎসুদ্দিদের বাড়বাড়ন্ত দেশ ও সমাজকে শয়তানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল।


সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে লুটপাট, অনাচার আর বিশৃঙ্খলা মানুষকে আরও অসহায় করে তোলে। সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেও ফ্যাসিস্টদের বুদ্ধিবৃত্তিক দোসররা নীরব থাকার কারণেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের প্রতি করুণার কোনো সুযোগ নেই। সেই ভয়াবহ, বিপজ্জনক ও ভয়ংকর পরিস্থিতি উপেক্ষা করে যারা রাজপথে জীবন বিপন্ন করে নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের প্রতি আমার বিনীত নিবেদন : তারা যেন সর্বদা তাদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও নিকটাত্মীয় স্বজনের বিষয়ে সতর্ক থাকেন। নিকটতম ব্যক্তিরা যদি বিনয়ী ও সৎ হয়, তাহলে তা নেতার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।


২.



অন্যদিকে সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও নিকটাত্মীয়রা যদি অসৎ ও দুর্বৃত্তপরায়ণ হয়ে পড়ে, তবে এর বিপদ সরাসরি নেতাকেই মোকাবিলা করতে হয়। নেতাকে হতে হবে মানবিক, কর্মঠ, সৎ, পরোপকারী ও বিনয়ী। একইসঙ্গে নেতাকে সর্বক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে। সারাক্ষণ নেতাকে ঘিরে থাকা নেতাকর্মী-সমর্থক ও নিকটাত্মীয় স্বজনরা তার অগোচরে তার নাম ভাঙাচ্ছে কিনা, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। নেতার অগোচরে নেতার নাম ভাঙানোর প্রবণতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। ৫ আগস্টের পর নাম ভাঙানোর এ আত্মঘাতী প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতাবানদের নাম ভাঙানো ও ক্ষমতার অপব্যবহার এখন বানের জলের মতো সমাজকে তলিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছে। সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলার বিস্তার ঘটছে, যা খুবই উদ্বেগজনক আলামত। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, লুটপাট আর নাম ভাঙিয়ে চলার মতো রুচিহীন অকাজ কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এ কাজে যারা জড়িত, তাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব বলে আর কিছু থাকে না। নেতার পাশে থেকে তার নাম ভাঙিয়ে চলার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন স্বভাবের লোকদের এড়িয়ে চলতে হবে।



৩.


জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার নাম। এদেশের ১৮ কোটি, মতান্তরে ২০ কোটি মানুষের রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, প্রত্যাশার নাম জুলাই। এ জুলাইয়ের চেতনায় দেশ গড়তে এ দেশের রাজনীতিবিদদের দায় ও দায়িত্ব অনেক বেশি। সমাজের সর্বস্তরে অব্যবস্থাপনা, অস্থিরতা, গণতন্ত্র নিয়ে মানুষের এখন ভয়, আশঙ্কা এবং নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং চিন্তা বিনির্মাণের যে স্বপ্ন, তা রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেই পূরণ করতে হবে।


দীর্ঘদিন সমাজ ও রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক সিস্টেম কলাপ্স করেছে। এর প্রভাব পড়েছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। এ থেকে উত্তরণের পথ বিনির্মাণ করবে এখন নতুন দিনের রাজনীতি। আমরা যদি সেই পথে চলতে ভুল করে ফেলি কিংবা জনআকাঙ্ক্ষা ভুলে যাই, তাহলে আমাদেরও জবাব দিতে হবে।


৪.


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে এ সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ হচ্ছে না। পিএস-এপিএসদের দুর্নীতি; নানা মন খারাপ করা সংবাদ পড়ে, অনেকের বিলাসী জীবন দেখে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ব্যাপারে আশাবাদী মানুষ হতাশ হয়েছে।


অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাভোগী শ্রেণি তৎপর দলের ও নেতার নাম ভাঙিয়ে সম্পদ লুটপাটের লক্ষ্যে; যা এ দেশের প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।


নতুন বাংলাদেশ গড়তে রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ খুব বেশি প্রয়োজন। মানুষের সত্যিকারের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘নতুন দিনের রাজনীতি’ সবার এজেন্ডা হতে হবে। আমরা অতীতে ফিরে যেতে চাই না। আমাদের সব ঐতিহাসিক লড়াইয়ের চেতনাকে ধারণ করে আমরা আগামী দিনে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যার মূল ভিত্তি হবে জাস্টিস। আমাদের সবার উচিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে রাজনীতিতে, দলে, রাষ্ট্রে, সমাজে-সবখানে একটি ইতিবাচক চিন্তার লালন ও তা বাস্তবায়ন করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও