দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

মানবজমিন প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে রাজপথের আন্দোলনে না গিয়ে দল গোছানোর কৌশল নেয় বিএনপি। ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে উদ্যোগ নেয়া হয় জেলা কমিটিগুলোর সঙ্গে ধারাবাবাহিক বৈঠকের। বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবি আদায়ে সম্ভাব্য আন্দোলনকে সামনে রেখে জোরদার করা হয়েছে পুনর্গঠনের সে তৎপরতা। তারই অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয়তলায় প্রায় প্রতিদিনই দুই থেকে তিন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন নীতিনির্ধারকরা। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যে দলের ৬৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্র জানায়, পবিত্র রমজানের আগেই ঢাকাসহ সব মহানগর নেতাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক সম্পন্ন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপির। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, বৈঠকে শীর্ষ নেতারা তৃণমূলে বিদ্যমান কোন্দলকে নিরসন করে মেয়াদোত্তীর্ণ থানা, ইউনিয়ন থেকে প্রতিটি স্তরের  কমিটি পুনর্গঠনের উপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিয়েছেন একগুচ্ছ নির্দেশনা। যার মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত সভা আয়োজনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা, নিষ্ক্রিয়দের তালিকা তৈরী করা, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি ও সহায়তা দেয়া। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন বৈঠকে অংশ নেয়া জেলার নেতারা। তৃণমূল থেকে জেলা কমিটি গঠনের তোড়জোরও শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে কঠোর আন্দোলনের পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ড প্রথমে জেলা নেতাদের বক্তব্য শুনেন। শেষে শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দেয়া হয় নানা দিকনির্দেশনা। ২রা মার্চ থেকে জেলা নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এতে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত হচ্ছেন স্কাইপির মাধ্যমে। বৈঠকে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সুপার সেভেন বা সুপার ফাইভ, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা অংশ নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধারাবাহিক এ বৈঠকের আগে প্রত্যেক বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন দলের শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা সারাদেশের সাংগঠনিক অবস্থার একটি চিত্র তুলে ধরেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ, নিষ্ক্রিয়দের তালিকা, অভ্যন্তরীন কোন্দলের বিষয়গুলো তারা হাইকমান্ডকে অবহিত করেন। সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর আলাদাভাবে জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে মতামত জানার চেষ্টা করেন শীর্ষ নেতারা। সংশ্লিষ্ট জেলার সাংগঠনিক অবস্থা জানার পাশাপাশি করণীয় সম্পর্কে নেয়া হচ্ছে তৃণমূলের মতামত। বৈঠকে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে দেয়া হচ্ছে- নেতাকর্মীদের হতাশা কাটিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার দিকনির্দেশনা। সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যেও কিছু জেলার নেতাদের প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়। মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈঠকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে তুমুল বাগবিতন্ডা আর কোন্দলের কারণে তাদের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। সেইসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন্দল নিরসনের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একইভাবে গত সোমবার মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির বৈঠকটিও বাতিল হয়। এই দুই জেলার নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একমত ও ঐক্যবদ্ধ হবার পর ফের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া কয়েকটি সাংগঠনিক জেলা শাখার বৈঠকের দিনক্ষন কোন্দলের কারণে নির্ধারণ হয়নি। সূত্র জানায়, তৃণমূলে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দফায় দফায় সাংগঠনিক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। সাংগঠনিক পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। নেতাদের অনেকে সেসব জেলা সফর করেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর থমকে গেছে পুনর্গঠনের উদ্যোগ। জেলা নেতাদের কোন্দলের কারণে অনেক জেলায় পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। অনেক জেলায় পুনর্গঠন দূরে থাক, নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটিতে হাতই দিতে পারেননি। আবার কিছু কিছু জেলা কমিটি পুনর্গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এবার সম্পুর্ণ নতুন আঙ্গিকে চলছে এ তৎপরতা। জেলা নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ সম্পাদকদের নিয়ে সরাসরি বৈঠক করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ফলে এখানে প্রভাব সৃষ্টি, প্রতিবন্ধকতা তৈরির সুযোগ নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। এছাড়া প্রতিটি বৈঠকেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অংশ নেন। তবে কিছু কিছু বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় থাকছেন। বৈঠকে অংশ নেয়া জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তৃণমূল থেকে দলকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূলকে চাঙ্গা করার জন্য এটার দরকার ছিলো। এটা দলের জন্য খুবই ইতিবাচক। নোতরা জানান, এ কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জড়িত থাকায় কেউ কোন কাজে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কোথায় কি সমস্যা তা শুনে নোট করেছেন নেতারা। কোন এলাকায় নিজেদের কোন্দল থাকলে একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে সমন্বয় করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। আবার জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের মিলে-মিশে কমিটির একটি কাঠামো তৈরী করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে তা করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও