গণতন্ত্রের মানসকন্যার কথা

যুগান্তর মোবায়েদুর রহমান প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:০৭

রবীন্দ্রনাথের একটি গানের একটি লাইন, ‘সব পথ এসে মিলে গেলো শেষে/তোমার দুখানি নয়নে’। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও এখন ওই গানের রেশ, তবে একটু ভিন্ন রূপে। ইংরেজিতে যেমন রয়েছে, All roads lead to Rome. অর্থাৎ, সব পথ এসে মিলিত হয়েছে রোমে। বাংলাদেশে এখন তেমনি ১৮ কোটি মানুষের দৃষ্টি এভারকেয়ার হাসপাতালে। যাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে তারা সশরীরে হাজির হচ্ছেন এ হাসপাতালে। সবারই চোখেমুখে ব্যাকুল উৎকণ্ঠা। কেমন আছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া? খালেদা জিয়া এখন আর শুধু দেশনেত্রী নন; এখন তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মাতৃরূপিণী বেগম জিয়া। বাংলাদেশের ৫৫ বছরের জীবনে বেগম জিয়াই একমাত্র নেত্রী, যিনি দল-মত নির্বিশেষে, আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে সবার নেত্রী। সবার মা। বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার পুরো উপদেষ্টা পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দেশনেত্রীর জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেছেন।


বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বেগম জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদের বাইরে বাংলাদেশের নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ৬০টি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বেগম জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদের কেউ কেউ বেগম জিয়াকে এক নজর দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, আবার অনেকে দেখার সুযোগ না পেলেও হাসপাতাল ভবন থেকে বেগম জিয়ার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছেন। আমাদের সবার জানামতে, বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবারে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক পর্যায়ে নামাজের ওয়াক্তে বেগম জিয়ার জন্য মোনাজাত করা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের মসজিদসমূহে লাখ লাখ মানুষ বেগম জিয়ার নেক হায়াতের জন্য রাব্বুল আলামিনের দরবারে দুই হাত তুলে মোনাজাত করেছেন।


সবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয়টি হলো, বেগম জিয়া কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে কোনোরকম রাষ্ট্রীয় পদবিতে নেই। তিনি এমপি নন, মন্ত্রী নন, প্রধানমন্ত্রী নন এবং প্রেসিডেন্টও নন। বরং শেখ হাসিনার শেষ দিকে এসে নাজিমুদ্দিন রোডের স্যাঁতসেঁতে কুঠুরিতে সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন এক অভিযোগে তাকে কয়েক বছর জেল খাটতে হয়েছে। জেলজীবন বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং তার প্রতি সর্বস্তরের জনগণের ভালোবাসাকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। আজ নির্বাচনের মাঠে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হলো, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। সেই জামায়াতে ইসলামীও স্পষ্ট ঘোষণা করেছে, রাজনৈতিকভাবে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যতই মতাদর্শগত মতভিন্নতা থাকুক না কেন, বেগম জিয়া তাদের সবার নেত্রী। বেগম জিয়া বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী। একই আওয়াজ ধ্বনিত হয়েছে চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের কণ্ঠে। একই আওয়াজ ধ্বনিত হয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মওলানা মামুনুল হকের কণ্ঠে।


বেগম জিয়ার প্রতি আরেকটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ শ্রদ্ধাঞ্জলি হলো, বাংলাদেশ সরকারের একটি কালজয়ী সিদ্ধান্ত। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেগম জিয়াকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বেগম জিয়ার এ নতুন স্ট্যাটাস অনুযায়ী, তিনি এখন তিন স্তরের নিরাপত্তা পাবেন। ইতোমধ্যেই এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এসএসএফ বা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, পিজিআর বা প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্টসহ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী দেশনেত্রীর সম্মানে এবং নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত দুটি ফাঁকা মাঠকে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারের ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এসব অস্থায়ী হেলিবেজ থেকে সামরিক হেলিকপ্টার ট্রায়াল রান হিসাবে টেক অফ ও ল্যান্ড করেছে। বলা হয়েছে, বেগম জিয়ার যে কোনো জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য, বিদেশ গমন অথবা অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের জন্য এ দুটি অস্থায়ী মাঠ হেলিকপ্টার ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হবে। পাকিস্তানের ২৪ বছর এবং বাংলাদেশের ৫৫ বছরে আমি কোনো প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোনো ব্যক্তিকে এমন বিরল সম্মান পেতে দেখিনি।


প্রশ্ন হলো, গত ১৭ বছর হলো বেগম জিয়া ক্ষমতায় নেই এবং কোনো পদ-পদবিতেও নেই। তারপরও তিনি একসঙ্গে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং একইসঙ্গে ১৮ কোটি জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কেন পেলেন? কীভাবে পেলেন?


২.


উপরের দুটি প্রশ্নের সহজ-সরল উত্তর হলো, কোনো ব্যক্তি বা দল বা মহল সুসংগঠিতভাবে তাকে এসব সম্মান দেয়নি। অর্গানাইজড সম্মান বা খেতাব বেশিদিন টেকে না। কিন্তু যে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জনগণ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হয়, সেই সম্মান এবং শ্রদ্ধা অব্যয় এবং অক্ষয় হয়। বেগম জিয়ার ব্যাপারে ঘটেছে ঠিক সেই ঘটনা।


যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন, টেলিভিশন দেখেন এবং সামাজিকমাধ্যম যথা- ইউটিউব বা ফেসবুক দেখেন বা চালান, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, বেগম জিয়ার ৪২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কোনোদিন কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। কারও বিরুদ্ধে বিগত ৪ দশক হলো তিনি অশালীন, অভব্য ও অমার্জিত ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করেননি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যে শেখ হাসিনা তার এতবড় ক্ষতি করেছেন, বিনা দোষে সাজানো-বানোয়াট অভিযোগে তাকে কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করেছিলেন, ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের পরদিন ৬ আগস্ট কারামুক্ত হওয়ার পর বিগত প্রায় ১৬ মাস হলো তিনি সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। যে শেখ হাসিনার চণ্ডালিনী নিষ্ঠুরতায় তার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল, যে নির্মমতার কারণে তার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় নির্বাসিত জীবনযাপন করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই বেগম জিয়া এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো শব্দ উচ্চারণ করেননি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও