সমুদ্রবন্দরে বিদেশি কোম্পানি ও সিঙ্গাপুর বানানোর গল্প
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ নামে আবুধাবির একটি কোম্পানিকে দরপত্র ছাড়া ইজারা দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার রীতিমতো জোরজবরদস্তি করছে। চুক্তি সম্পাদিত না হলেও এই কোম্পানির কর্মকর্তারা বন্দরে আসা–যাওয়া করছেন বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও এই উদ্যোগের বিরোধীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ীদের বিপন্ন করে লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বন্দরের সব রকম মাশুল অনেক বাড়ানো হয়েছে। আগে থেকেই বিদেশি কোম্পানির উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করা ছাড়া এর আর কোনো যুক্তি নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার প্রথম তৎপরতা শুরু হয় ১৯৯৭ সালের দিকে। সে সময় আমরা ক্রমাগত শুনেছি প্রয়োজনের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মক্ষমতা খুবই অপ্রতুল, ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং বলা হয়েছে অবিলম্বে একটি মার্কিন কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকা ইজারা দিয়ে বিদেশি কোম্পানির কর্তৃত্বে নতুন কনটেইনার টার্মিনাল না করলে বাংলাদেশ সমূহ বিপদে পড়বে।
১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ ব্রিটিশ কনসোর্টিয়াম চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় ‘প্রাইভেট পোর্ট’ নির্মাণের প্রস্তাব জমা দেয়। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর প্রস্তাব জমা দেয় মার্কিন এসএসএ কোম্পানি। ১৯৯৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একই ধরনের প্রস্তাব জমা দেয় অস্ট্রেলিয়ার পিএনও পোর্ট। ১৯৯৯ সালের ৪ জানুয়ারি লন্ডনের পোর্ট ভেঞ্চার এবং ১৮ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর পোর্ট জমা দেয় তাদের প্রস্তাব। এই সব কটি প্রস্তাবের সঙ্গেই দেশের ভেতরে নানা লবিস্ট গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে।
চট্টগ্রাম পোর্টেরও নিজস্ব প্রস্তাব ছিল; কিন্তু তার প্রতি মনোযোগ নেই, তা আটকে থাকে ফাইলে। আর দ্রুত বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে সামনে আসে মার্কিন এসএসএ কোম্পানি। টেন্ডার ছাড়াই তাদের সঙ্গে চুক্তির কার্যক্রম শুরু করে তৎকালীন সরকার।
মার্কিন কোম্পানির কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল কর্ণফুলীর মোহনায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রে বের হওয়ার মুখে। কর্ণফুলী নদীর ডান তীরের পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় ‘২০ দশমিক ৯৭ একর জমি লিজের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ৯৯ বছর মেয়াদে এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৯৯ বছরের জন্য ইজারা এবং প্রথম দফায় ৩০ বছর এবং পরবর্তী সময়ে আরও ৬ দফা ৩০ বছর মেয়াদি অর্থাৎ মোট ২১০ বছর মেয়াদি লাইসেন্স প্রদান’ ছিল চুক্তির মূল দিক।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সমুদ্রবন্দর