বাংলাদেশে পিআর ভোট পদ্ধতি: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান “প্রথম-হওয়া-জয়ী” (First Past the Post) ভোট পদ্ধতি প্রায়শই বাস্তব ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টনে বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক সময় ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ সংসদে কার্যকর প্রতিনিধিত্ব পায় না। এই বাস্তবতায় বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের আওতায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation – PR) ভোট পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টন করা হয়। ফলে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রকৃত ভোটশক্তি অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব পেতে পারে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতির প্রবর্তন গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারে। তবে এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত রয়েছে। যেমন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা, দলীয় শৃঙ্খলা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক জটিলতা। তবে রাজনৈতিক বহুমতকে সম্মান জানিয়ে অংশীদারিত্বমূলক রাজনীতি বিকশিত না হলে এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া এবং দেশের বাস্তবতার সঙ্গে তা খাপ খাওয়ানো অপরিহার্য। এই বিষয়ের মূল ধারণাগুলি বুঝার সুবিধার্থে, লেখার মধ্যে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।


পিআর পদ্ধতির মৌলিক ধারণা


• ভোটের Proportionate (PR) পদ্ধতি বা Proportional Representation (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা) হলো এমন একটি ভোট পদ্ধতি, যেখানে নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী যে পরিমাণ ভোট পায়, সংসদ বা নির্বাচিত আসনে তাদের সেই অনুপাতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাধারণত First Past the Post (FPTP) বা সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী পদ্ধতিতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, সে একক আসনে জিতে যায়। এখানে মোট ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব হয় না। কিন্তু PR পদ্ধতিতে, একটি দলের পাওয়া মোট ভোটের শতাংশের সাথে সংসদে তাদের আসনের সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ধরা যাক একটি সংসদে মোট ১০০টি আসন আছে। নির্বাচনে, লাল দল পেয়েছে ৪০% ভোট তারা আসন পাবে ৪০ টি। সবুজ দল পেয়েছে ৩৫% ভোট তারা আসন পাবে ৩৫ টি। নীল দল পেয়েছে ১৫% ভোট তারা আসন পাবে ১৫ টি। সাদা দল পেয়েছে ১০ % ভোট এবং তারা আসন পাবে ১০ টি। অর্থাৎ, ভোটের পাওয়ার অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন হবে। পিআর পদ্ধতির ভোটকে আসনে রূপান্তরের সময় জনগণের মোট মতামতকে প্রতিফলিত করে। এজন্য একে অনেক বিশেষজ্ঞ এই পদ্ধতিকে “ন্যায্য প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি” বলে থাকেন।


• আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) এর বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন: ১) পার্টি লিস্ট পদ্ধতি বা Party List PRঃ এটি পি আর-এর সবচেয়ে প্রচলিত ধরন। এখানে ভোটাররা সরাসরি কোনো প্রার্থীকে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়। নির্বাচনের আগে প্রতিটি দল একটি প্রার্থীর তালিকা (Party List) জমা দেয়। নির্বাচন শেষে প্রতিটি দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন পায় এবং তালিকা থেকে প্রার্থীরা সংসদে যায়। পার্টি লিস্ট পদ্ধতির আবার দুটি ধরন আছে: ক) বন্ধ তালিকা বা Closed List ঃ ভোটার কেবল দলকে ভোট দিতে পারে, তালিকার ক্রম ঠিক করে দল। যেমন, লাল দল যদি ২০% ভোট পায়, আর সংসদে ৩০০ আসন থাকে, তবে তারা ৬০ আসন পাবে। এই ৬০ জন প্রার্থী যাবে লাল দলের আগেই নির্ধারিত তালিকা থেকে। ফলে পদ্ধতিটি সহজ এবং ভোটগণনা দ্রুত হয়। তবে প্রার্থী নির্বাচনে দলীয় নেতৃত্বের একচেটিয়া ক্ষমতা থাকে, জনগণের প্রার্থীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। খ) Open List (উন্মুক্ত তালিকা)ঃ ভোটার কেবল দলকে নয়, তালিকার ভেতর কোন প্রার্থীরা সংসদে যাবে, তাও নির্ধারণ করতে পারে। এতে ভোটারদের ক্ষমতা বাড়ে, কারণ তারা দলীয় তালিকার ভেতর থেকেও পছন্দ প্রকাশ করতে পারে। ফিনল্যান্ড এবং ব্রাজিল-এ এই পদ্ধতি চালু আছে। গ) স্থানান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতি বা Single Transferable Vote (STV)ঃ এটি একটি অপেক্ষাকৃত জটিল কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এখানে ভোটাররা প্রার্থীদের পছন্দের ক্রমে (১, ২, ৩ ইত্যাদি) ভোট দেন। একটি প্রার্থী নির্বাচিত হতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট (quota) পেতে হয়। যদি কোনো প্রার্থী প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভোট পায়, তাহলে অতিরিক্ত ভোট অন্য প্রার্থীর কাছে স্থানান্তরিত হয়। ইউরোপের আয়ারল্যান্ড এবং মাল্টায় এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে ভোটগণনা অনেক জটিল। ঘ) মিশ্র নির্বাচনি ব্যবস্থা বা Mixed Member Proportional (MMP)ঃ এটি একটি মিশ্র ব্যবস্থা—এখানে FPTP এবং PR উভয়ই একসাথে ব্যবহৃত হয়। সংসদের অর্ধেক আসন নির্ধারিত হয় সরাসরি ভোটে (FPTP)। বাকি অর্ধেক আসন দেওয়া হয় PR পদ্ধতিতে, জাতীয়ভাবে মোট ভোটের অনুপাতে। তবে কোন কোন আসনে কি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে সেটা আগে থেকেই বলা হয়। এর ফলে বড় দল যেমন সরাসরি আসন জেতে, ছোট দলগুলোও PR আসনের মাধ্যমে সংসদে প্রবেশের সুযোগ পায়। জার্মানি এবং নিউজিল্যান্ড এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর ফলে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হয়।


• আসন বণ্টনের গাণিতিক সূত্র: পিআর পদ্ধতিতে ভোটকে আসনে রূপান্তর করতে বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র (seat allocation formulas) ব্যবহার করা হয়। এগুলির কারণে সংসদের গঠন সামান্য ভিন্ন হতে পারে। যেমন- ১) D’Hondt পদ্ধতি ২) Sainte-Laguë পদ্ধতি ৩) Largest Remainder পদ্ধতি (Hare বা Droop Quota) ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও