কমিউনিটি ক্লিনিক : সেবার মানোন্নয়নে করণীয়

ঢাকা পোষ্ট সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫০

জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়, তবে এর প্রস্তুতি বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। কমিউনিটি ক্লিনিক হলো ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ছোট একতলা ভবন, যা কমিউনিটি সদস্যদের কর্তৃক দানকৃত ৫-৮ শতাংশ জমির ওপর সরকারি তহবিলে তৈরি করা হয়েছে।


আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সিএইচসিপি-র রোগ নির্ণয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব এবং প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক মূলত একটি ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। ফলে সাধারণ মানুষও সেখানে যায় প্রধানত ওষুধ সংগ্রহের প্রত্যাশায়, অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যামিলি প্ল্যানিং, এমএনসিএএইচ, আইএমসিআই, এনসিডিসি, এনএনএস, আইওয়াইসিএফ, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, এসআরএইচআর, টিবি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ইত্যাদি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।


স্ট্রেংথ–উইকনেস–অপরচুনিটি এবং থ্রেট (SWOT) বিশ্লেষণে দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশকিছু শক্তির জায়গা রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় কারণে সহজেই পৌঁছানো যায়; স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততায় পরিচালিত হওয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়; বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়; স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে একীভূত করার চেষ্টা রয়েছে এবং সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে একটি ট্রাস্ট গঠনের উদ্যোগও শক্তি হিসেবে গণ্য করা যায়।


সিএইচসিপি-রা ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতের পাঁচ বছরের মেয়াদি উন্নয়ন প্রোগ্রামের আওতায় বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করতেন। এ ধরনের উন্নয়ন প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়ায় সরকার ইতিমধ্যেই এদের বেতনভাতা অপারেটিং বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে, তাদের নিয়মিত বেতনভাতা প্রাপ্তিতে সব বাধা দূর হয়েছে। তাই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের আর্থিক স্থিতিশীলতা মজবুত হয়েছে।


তবে এর দুর্বলতাও স্পষ্ট। প্রোমোটিভ ও প্রিভেন্টিভ কেয়ারের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে এটি মূলত কিউরেটিভ সেবা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘ক্লিনিক’ শব্দ প্রয়োগ করায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণাগত সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায় অধ্যয়ন করা জনবল যেমন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, নার্স, পাবলিক হেলথ নার্স বা মিডওয়াইফের পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীকে সিএইচসিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাত্র একজন ব্যক্তিকে দিয়ে প্রোমোটিভ, প্রিভেন্টিভ ও কিউরেটিভ সেবার পাশাপাশি ফার্মাসিস্টের দায়িত্বও পালন করানো হয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্বল অবকাঠামো, সীমিত জায়গা এবং অনেক ক্ষেত্রে অনগ্রসর ও দূরবর্তী এলাকায় ক্লিনিকের অবস্থান।


বর্তমানে সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪,৪৬৭-এ। কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্যের নেতৃত্বে সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণ নিয়ে গঠিত ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিউনিটি গ্রুপ কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা করে।


তিন মাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি-ই এই ক্লিনিকগুলোর প্রধান সেবাদানকারী। বর্তমানে দেশে সিএইচসিপি-র মোট সংখ্যা ১৩,৯২৩ জন। মূল পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীর সপ্তাহে তিনদিন সেবা প্রদানের কথা থাকলেও তা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে সিএইচসিপি-ই কার্যত সেবাদানকারী।


রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার, গ্লুকোমিটার এবং ওজন মাপার মেশিন হলো কমিউনিটি ক্লিনিকের মৌলিক সরঞ্জাম। বর্তমানে অধিকাংশ ক্লিনিকে এসব সরঞ্জাম কার্যকর অবস্থায় নেই। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। অসংক্রামক রোগের দুই প্রকার ওষুধ (ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ)-সহ বর্তমানে মোট ২২ প্রকার ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। পূর্বে ৩১ প্রকার ওষুধ দেওয়া হলেও তা ধীরে ধীরে কমিয়ে প্রথমে ২৯, পরে ২৭ এবং অবশেষে ২২-এ নামিয়ে আনা হয়েছে।


কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিকভাবে প্রতিশ্রুতি ছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রোমোটিভ, রোগ প্রতিরোধক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রিভেন্টিভ এবং সীমিত মাত্রায় রোগ প্রতিকারমূলক (কিউরেটিভ) সেবা দেওয়ার। কিন্তু বাস্তবে এগুলো পর্যাপ্তভাবে কার্যকর না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এখন প্রধানত কিউরেটিভ সেবা কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও