
বিচ্ছেদ নাকি মানিয়ে নেওয়া?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে গুলতেকিন খান-এর একটি পুরোনো স্মৃতিচারণা। তিনি তাতে লেখেন–রাগ হলেই হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিন খানকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলতেন। ‘একদিন এক শীতের রাতে হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিন খানকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন।’- এই একটি বাক্যই যেন মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। যে হুমায়ূন আহমেদ আমাদের সাহিত্যজগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, যার সৃষ্ট চরিত্রে আমরা পেয়েছি প্রেম, মায়া, আবেগ ও মানবিকতা—তার ব্যক্তিগত জীবনের এমন এক শীতল অধ্যায় আজ আলোচনার কেন্দ্রে। এই পোস্টের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক নারীর নিঃশব্দ বেদনা, এক সম্পর্কের ভাঙনের ইতিহাস, আর সমাজের সেই পুরোনো মানসিকতা, যেখানে ভালোবাসা যতই গভীর হোক, শক্তির ভারসাম্য থাকলে তবেই টিকে থাকে সম্পর্ক।
আমরা সাহিত্যপাঠক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিতে প্রেমের মহিমা দেখেছি, কিন্তু বাস্তব জীবন যে কখনো কখনো কল্পনার চেয়েও কঠিন, সেটি মনে করিয়ে দিলেন গুলতেকিন।একজন নারী, যিনি দীর্ঘদিন এক মহান লেখকের পাশে থেকে তাঁর সাফল্যের নেপথ্যে ছিলেন, তিনিই এক রাতে হয়ে উঠেছিলেন অচেনা—
যার ঠাঁই ছিল না নিজের ঘরের ভেতরে।
এই স্বীকারোক্তি কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, এটি এক সামাজিক প্রতিচ্ছবি—যেখানে নারী এখনো অনেক সময় সম্পর্কের ভেতর থেকেও একা, ভালোবাসার ভেতর থেকেও অনাদৃত। আমরা প্রায়ই ভাবি, প্রেম থাকলেই সম্পর্ক টিকে যায়।
কিন্তু সত্য হলো—প্রেম টিকিয়ে রাখতে হয় সম্মান, সহমর্মিতা ও ন্যায্যতার ভিতের ওপর। যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়, সেখানে সম্পর্কের উষ্ণতা শীতল হয়ে যায়।
গুলতেকিনের এই লেখাটি কোনো অভিযোগ নয়,
বরং এক সময়ের সাক্ষ্য–যে সময় নারীরা নীরব থেকে সব সহ্য করতেন, আজ তারা লিখছেন, বলছেন, নিজেদের কণ্ঠে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন। এই পোস্ট আমাদের ভাবায়—কত অনুচ্চারিত কষ্ট, কত অগোচর বেদনা, যা একদিন হঠাৎ উঠে আসে সমাজের আয়নায়, আর তখন আমরা বুঝতে পারি, যে সম্পর্ককে আমরা দূর থেকে নিখুঁত ভাবতাম, তার ভেতরেও ছিল গভীর শীতরাত্রি।
প্রেম, খ্যাতি, সাফল্য—সবকিছু ছাপিয়ে মানবিক সম্পর্কের মূলভিত্তি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা। যে ঘরে শ্রদ্ধা থাকে না, সেই ঘর যত বড় হোক, ততই ঠান্ডা হয়। গুলতেকিনের নীরব উচ্চারণ সেই শীতল ঘরের প্রতিধ্বনি—যা এখন সমাজকে প্রশ্ন করছে—ভালোবাসা কি শুধু উষ্ণতা চায় নাকি কেবল নামের উজ্জ্বলতা?
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিচ্ছেদ
- মানিয়ে চলা