
তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার এখনই সময়
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ; পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশ যেমন নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত, তেমনই সম্ভাবনাময় একটি জনপদও বটে। বাংলাদেশের মানুষ সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী। তারা যে কোনো কাজ খুব সহজেই আত্মস্থ করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তাদের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। আমরা যদি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বা এরও বেশি যখন কর্মক্ষম থাকে, সেই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই সৃষ্টি হয়। আবার কারও মতে, হাজার বছরে একবার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যে দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে পারে, তারাই উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগিয়ে একটি দেশ কীভাবে উন্নতির শিখরে আরোহণ করে, এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হচ্ছে চীন। চীন তাদের জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই এখন কর্মক্ষম। তাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। কিন্তু সেই কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে কর্মসৃজনে নিয়োজিত করতে পারছি না আমরা। তরুণদের অধিকাংশই বেকার অবস্থায় রয়েছে। এমনকি উচ্চশিক্ষিত তরুণদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। একজন কর্মক্ষম মানুষের বেকার থাকার মতো যন্ত্রণা আর কিছুতে নেই। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো কার্যকর পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। অথচ এ সৃজনশীল কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে যদি আমরা উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হতো।
বাংলাদেশে যারা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আনুষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, তরুণদের মূল উদ্দেশ্য থাকে কীভাবে সরকারি চাকরিতে নিজেদের নিয়োজিত করা যায়। তারা ঝুঁকি নিতে চায় না। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আনুষ্ঠানিক খাতের অবদান খুবই কম। অনানুষ্ঠানিক খাতে যে উৎপাদন কার্যসম্পাদিত হয়, তার পরিমাণ ফর্মাল জিডিপির ৮০ শতাংশের মতো। এটা নিশ্চিত যে, আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশে বিরাজমান পর্বতপ্রমাণ বেকার সমস্যা দূর করা যাবে না। উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে ব্যাপকভিত্তিক আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। একজন তরুণকে উচ্চশিক্ষা লাভের পর সরকারি চাকরি বা আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে তাকে অন্যের জন্য কর্মসৃজনের কথা ভাবতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ অত্যন্ত সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী। তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। দেশের একজন যুবক বা যুবতি যখন বিদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়, তখন তারা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু দেশে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সৃজনশীল কাজের জন্য ঝুঁকি গ্রহণ করতে চায় না। কারণ আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য তেমন একটা অনুকূল নয়। আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরির মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যা দূর করা যাবে না। এজন্য আত্মকর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
পাঠ্যক্রমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা গেলে তারা শিক্ষাজীবন শেষে সরকারি চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেরাই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। যারা শিক্ষিত তরুণ, তারা সাধারণত অনানুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করতে চায় না। অনানুষ্ঠানিক খাতে চাকরির পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধাও পর্যাপ্ত নয়। তাই এ জনগোষ্ঠী চেষ্টা করলেই বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে। এতে তাদের যেমন আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, তেমনই তারা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- তরুণ উদ্যোক্তা