অপ্রকাশযোগ্য শোকের মৃত্যুগুলোর জন্য মেকি শোক

প্রথম আলো রাফসান গালিব প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৭

সব মানুষের রক্ত লাল—এই প্রবচনটার প্রচলন মূলত মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই সেটার প্রকাশ করতে। দুঃখজনক হচ্ছে, রক্ত বা রক্তের রংও আসলে সে ফয়সালা দেয় না। এর জন্য আমাদের দেখতে হয় অনুভূতির প্রকাশও। শুধু রক্তের রং না; সুখ, শান্তি, দুঃখ বা শোকের রং কেমন সেখানেই একজন মানুষ কতটা মানুষ হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে, সেটি খোলাসা হয়ে যায়। মানে এভাবেই হয়ে আসছে আদিকাল থেকে। যদিও আমরা সাম্যের জয়গান গেয়ে বিষয়টিতে স্বস্তির প্রলেপ লাগাতে চাই।


কোনো কোনো সমাজতাত্ত্বিকের মতে, সমাজ নির্দিষ্ট কিছু জীবনকে ‘শোকযোগ্য’ হিসেবে ফ্রেমিং করে থাকে এবং অন্যদের ‘অ-শোকযোগ্য’ হিসেবে। কার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া সমাজ কীভাবে প্রকাশ করছে, তাতেই শ্রেণি রাজনীতি বোঝাটা খুবই সহজ বলা যায়। সিয়াম মজুমদারের নামটা এখনো এ দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না। যে কয়জন জানে, তাদেরও এ কয় দিনে ভুলে যাওয়ার কথা বা অল্প কয়েক দিনেই ভুলে যাবে। সিয়াম মগবাজার এলাকায় একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন।


২৪ ডিসেম্বর চা আনতে গিয়ে উড়ালসড়কের ওপর থেকে ছোড়া ককটেলে প্রাণটা হারালেন। তাঁর শরীরের রক্ত-মাংস চায়ের দোকানের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছিল। মানুষের মৃত্যু তো নিশ্চিত একটা ঘটনা। তাই বলে এতটা বীভৎস মৃত্যু, কল্পনা করা যায়! কারা ককটেল ছুড়ল, কারা একটা তরতাজা তরুণের প্রাণ কেড়ে নিল, তা হয়তো আমাদের কখনো জানা হবে না। ঘাতকেরা ঠিকই আরও মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকবে।  


খুলনার গ্রাম থেকে সিয়ামের পরিবারটি ঋণগ্রস্ত হয়ে ঢাকায় এসেছিল। তাঁর বাবা রিকশা চালানো শুরু করেন। মা হয়ে যান আমাদের ভাষায় বাসাবাড়ির ‘কাজের বুয়া’।  সিয়াম হয়েছিলেন দোকানের কর্মচারী। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার। ছেলেকে হারিয়ে মা সিজু বেগমের বিলাপ, ‘আমি আর ঢাকায় থাকমু না। ঢাকায় আইস্যা সব শেষ হইয়্যা গেল।’ এই ‘জাদুর শহর’ ঢাকায় কেনই–বা তাঁরা আর থাকবেন!


এবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আরেক হতভাগা ভ্যানচালক ওমর ফারুকের মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনা করা যাক। চুরির অভিযোগে তাঁকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। শুনে নিশ্চয় ‘স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া’ কোনো গণপিটুনির মৃত্যুর কথা মনে হতে পারে। কিন্তু এ হত্যার ঘটনা চরম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়।


ভবানীগঞ্জের সিএনজি মালিক সমিতির সদস্যরা ওমর ফারুককে প্রথমে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে একটি প্রাচীরের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে উভয় হাত ও পায়ে হাতুড়ি দিয়ে কয়েকটি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তখনো মারধর চলতে থাকে। পানি পান করতে চাইলে নদীতে নিয়ে ওমর ফারুককে বিবস্ত্র করে চুবানো হয়। এরপর তাঁর পায়ুপথে শুকনা মরিচের গুঁড়া ঢেলে দেওয়া হয়।


নির্যাতনের একপর্যায়ে ওমর ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে ওমর ফারুকের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওমর ফারুককে ১০০ টাকা অর্থদণ্ড ও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।


এরপর ওমর ফারুককে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে তাঁকে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২০ ডিসেম্বর ওমর ফারুকের মৃত্যু হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও