
দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিক বাস্তবতা
শিক্ষা, জ্ঞান এবং দক্ষতা — এই তিনটি মৌলিক ধারণা মানব সমাজের বিকাশে অমূল্য ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের কাছ থেকে শুরু করে আধুনিক দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং প্রযুক্তিবিদগণ এগুলোর সংজ্ঞা দিয়েছেন, এবং সময়ের সাথে সাথে এসব ধারণার রূপ ও কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়েছে। আজকের বিশ্বে জ্ঞান অর্জন আর শিক্ষা আর শুধু পাঠ্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই - এটি এখন হয়ে উঠেছে গতি পরিবর্তনশীল (dynamic), ডিজিটাল, সহযোগিতামূলক (collaborative), এবং ব্যবহারিক (practical)। এই যুগে জ্ঞান, শিক্ষা আর দক্ষতার ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে: এটি এখন আর কেবল তথ্য জানার বিষয় নয়, বরং তথ্যকে ব্যবহার করা, বিশ্লেষণ করা, নতুন কিছু তৈরি করা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে তা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সক্ষমতা।
শিক্ষা (Education)-জ্ঞানের সূতিকাগার
শিক্ষা বা Education হলো একটি সংগঠিত এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা সমাজ জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব, নৈতিকতা, এবং সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন করে। এটি ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী নতুন তথ্য শিখে এবং প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলি অর্জন করে। শিক্ষা শুধু যে বিষয় বা দক্ষতা শেখায় তা নয়, বরং ভালো মানুষ হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে। শিক্ষা সামাজিক সম্পর্ক, শৃঙ্খলা এবং সহযোগিতা শিখায় যা একটি সমাজের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষা ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করে, তাকে সমৃদ্ধ ও সক্ষম করে।
প্লেটো মনে করতেন, শিক্ষা হল আত্মার শুদ্ধি এবং তাকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে পরিচালিত করা। তার দৃষ্টিতে, শিক্ষা ছিল আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মার সৃষ্টির প্রক্রিয়া। ডিউইয়ের (John Dewey) মতে, শিক্ষা জীবনের জন্য প্রস্তুতি নয়, বরং জীবনই শিক্ষা। তিনি বলেন, শিক্ষা এক ক্রমবিকাশী প্রক্রিয়া, যেখানে শিক্ষার্থী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, চিন্তা ও সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়।
“Education is not preparation for life; education is life itself.” একুশ শতকের শিক্ষা দার্শনিক ম্যাক্সিন গ্রিন (Maxine Greene) বলেন শিক্ষা হচ্ছে স্বাধীনতা, অবস্থান এবং স্ব-পরিচয় তৈরি করার প্রক্রিয়া। তিনি শিক্ষাকে একটি মনের মুক্তির পথ হিসেবে দেখেছেন। “Education is the means by which we learn to live together in a world that demands new ways of thinking and acting.”
জ্ঞান বা Knowledge এর সংজ্ঞা এবং দার্শনিক ধারণা
ইংরেজিতে ‘জ্ঞান’ শব্দের মূল শব্দটি হল ‘’Knowledge’’. তবে জ্ঞান শব্দের বিপরীতে স্থান বিশেষে ইংরেজিতে wisdom, understanding, consciousness, sense, know, learning ইত্যাদি শব্দসমূহ ব্যবহৃত হয়। অনেকে ‘Skill’ কে জ্ঞান শব্দের সাথে তুলনা করেন। শব্দ দুটি এক নয় তবে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। দক্ষতা (Skill) হল জ্ঞান এবং অনুশীলনের ফসল। কেউ হয়ত গাড়ি চালতে জানে (জ্ঞান), কিন্তু সে যদি বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে না পারে এবং চর্চা না করে, তাহলে তার দক্ষতা (driving skill) হবে না। Skill কে সরাসরি জ্ঞান বলা যায় না। Skill হলো জ্ঞানের ব্যবহারিক রূপ, যা অভ্যাস ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গঠিত। Skill এর বিভিন্ন শ্রেণি আছে, যেমন Hard Skill, soft skill, cognitive skill, Life skill ইত্যাদি।
বিশ্বের অনেক বিখ্যাত দার্শনিক এবং মনীষী জ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা বা ধারণা দিয়েছেন। যেমন-
• প্লেটো (Plato) বলছেন, "Knowledge is justified true belief." অর্থাৎ “জ্ঞানে সত্য থাকতে হবে, বিশ্বাস থাকতে হবে, এবং সে বিশ্বাসের যৌক্তিক ভিত্তি থাকতে হবে।” শুধু বিশ্বাস নয়, বিশ্বাসটি সত্য এবং যৌক্তিকভাবে প্রমাণযোগ্য হতে হবে। তাহলেই তা’কে জ্ঞান বলা যাবে। অর্থাৎ শেখা এবং প্রয়োগ। জ্ঞানে সত্যতা আছে মানে সেটা কোন ফেক কিছু বা মিথ্যা থাকতে পারবে না এবং তা প্রমাণ করতে হবে আর সেটাই প্রয়োগ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিকাশ
- সমাজের সমৃদ্ধি