কেউ কড়াই গরম করে, কেউ রুটি ভাজে

www.ajkerpatrika.com গোপালগঞ্জ বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৬

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না।’ অর্থাৎ ছোটখাটো ঘটনা ঘটবে, সেটা সরকারের জানা ছিল। কিন্তু বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা এড়ানো গেল না। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আহত হয়েছেন অনেকেই। এই হামলার পেছনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হাত ছিল বলে অভিযোগ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।


গোপালগঞ্জের ঘটনার তিনটি পক্ষ। এনসিপি–যাদের কর্মসূচি, সরকার বা প্রশাসন—যাদের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং আরেকটি পক্ষ যারা কর্মসূচি পালনে বাধা দিয়ে সহিংসতা ঘটিয়েছে। প্রথম দুটি পক্ষ সচেতন থাকলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো বলে মনে হয় না। গোপালগঞ্জ ঐতিহাসিকভাবে একটি স্পর্শকাতর স্থান। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের আগে একটি ন্যূনতম সাবধানতা ও কৌশলগত ব্যবস্থা থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু এনসিপি ও প্রশাসনের মধ্যে সেই সতর্কতা ছিল না বলেই মনে হয়। বরং তারা যেন নিজেদের অবস্থানকে কেবল প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে।


প্রশ্ন হতে পারে, দুই পক্ষের ত্রুটি ধরে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ আক্রমণকারীদের কি দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে? অবশ্যই নয়। হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এবং কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। আগেই বলেছি, গোপালগঞ্জ যেভাবেই হোক বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে একটি স্পর্শকাতর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী শাসনের অবসান হলেও এই জেলায় আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন হয়নি। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাইরের কোনো অংশ নয়। অন্য জেলায় সব দল রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারলে গোপালগঞ্জেও পারবে। তরুণদের দিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবেই ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সারা দেশে কর্মসূচির নাম ‘পদযাত্রা’ হলেও গোপালগঞ্জে তা ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হলো কেন?



সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মনে করছেন, ‘মার্চ টু শব্দবন্ধটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই স্পর্শকাতর এবং প্রতীকী এক শব্দ। এর রেশ এখনো জেগে আছে “মার্চ টু ঢাকা”র মতো আন্দোলনের স্মৃতিতে, যা দেড় দশক ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। সে ক্ষেত্রে “মার্চ টু গোপালগঞ্জ”—এটি কি নিছক পিরোজপুর থেকে গোপালগঞ্জের দিকে হেঁটে আসা? নাকি এর মধ্যে অন্য কোনো বার্তা, ইঙ্গিত, এমনকি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল নিহিত?’
মোজাম্মেল হোসেন আরও লিখেছেন,‘কয়েক মাস ধরে আমরা লক্ষ করছি, জুলাই আন্দোলনের অনেক জোরালো সমর্থক, এমনকি কিছু প্রভাবশালী সংগঠক—বিশেষ করে যাঁরা প্রবাসে অবস্থান করছেন এবং ইউটিউবার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার পরিচয়ে পরিচিত—তাঁরা ধারাবাহিকভাবে উত্তেজক ভাষায় কথা বলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এর প্রভাব বাস্তব মঞ্চে—বিশেষ করে ঢাকায়—বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে। এমনকি তাঁদের বক্তব্যে আমরা শুনেছি: ‘৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি বা জাদুঘর ভেঙে ফেলতে পেরেছি, এবার আমরা তাঁর মাজার ভাঙব’—এই ধরনের চূড়ান্ত উসকানিমূলক বক্তব্যও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। বিষয়টি কোনোভাবেই অবহেলার নয়। যেখানে বঙ্গবন্ধুর কবর রয়েছে সেই গোপালগঞ্জ—তাকে ঘিরে যদি কেউ প্রতীকী বা প্রত্যক্ষ উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করে, সেটি সুশৃঙ্খল প্রতিবাদের অংশ নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তেজনার বিস্ফোরক উপাদান।’


তাহলে কী করলে ভালো হতো? মোজাম্মেল হোসেন লিখেছেন, ‘এনসিপি একটি নবীন দল। তাদের নেতৃত্বে তরুণেরাই আছেন। এই অবস্থায় তাঁদের পক্ষ থেকে আরও দায়িত্বশীলতা আশা করা যেত। বিশেষ করে, যদি তাঁরা স্পষ্ট করে বলতেন—‘আমরা জুলাই শহীদদের স্মরণ করছি, জুলাই আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে যাচ্ছি। গোপালগঞ্জবাসী, আমরা আপনাদের সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী।’ তাহলে একধরনের সৌজন্যবোধ ও রাজনৈতিক শালীনতার প্রকাশ ঘটত। কিন্তু তাঁরা সেই পথ নেননি। বরং এমন ভঙ্গিতে তাঁদের অবস্থান প্রকাশিত হয়েছে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালার মতো।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও