
বুদ্ধিজীবীরা কি মৌনই থাকবেন
আমি তখন ক্লাস টেনের ছাত্র। প্রধান শিক্ষক ডেকে পাঠিয়েছেন শুনে আমি তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। এ কে মাহমুদুল হক ছিলেন রাশভারী কিন্তু মজার মানুষ। আবার কড়া বলতে কড়ার গুরু। তিনি ডেকে পাঠাবেন কেন? এই প্রশ্নের জবাব মিলল তাঁর রুমে যাওয়ার পর। হঠাৎ করেই স্কুলে উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল—বক্তৃতা করতে হবে! তখন ঢাকার কাগজে, চট্টগ্রামে আমার ছড়া ছাপা হচ্ছে মাত্র। কিন্তু ভাষণ তো দিতে শিখিনি। উপস্থিত বক্তৃতা তো আরও কঠিন। কিন্তু স্যারের আদেশ। যা মনে এল বলে চলে এলাম।
পরদিন জানলাম আমার জন্য উপহার আছে। আমি প্রথম হয়েছি। সে উপহারের বইটি নিয়ে কিছু বলার আগে একটা কথা বলতে চাই। এখন আমাদের সমাজে হঠাৎ করে শিক্ষকের মানহানি বেড়ে গেছে। যে শিক্ষক মানে গুরু বা অভিভাবক, সেই শিক্ষক এখন নানা ধরনের অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার। আমি এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না। কারণ এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা আছে। কিন্তু এটা মানতে হবে, এই শিক্ষকেরাই ছিলেন আমাদের গুরু, আমাদের পিতৃতুল্য। এই যে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমাকে হঠাৎ করে উপস্থিত বক্তৃতার জন্য মনোনীত করা, এটা আমার কাছে বিস্ময়ের মনে হয়েছিল। অথচ আজ মধ্য ষাটে দাঁড়িয়ে আমি জানি, আমি বলতে ভালোবাসি। লেখার চেয়েও আমার কথা ভালোবাসেন, এমন মানুষের সংখ্যা বেশি। প্রায় নির্গুণ একজন মানুষকে যে এই গুণটি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল, তা আমি হয়তো কোনো দিনও জানতাম না; যা আমাদের শিক্ষক আমার সে বয়সে জানতেন বা বুঝে নিয়েছিলেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বুদ্ধিজীবী