পিআর-এফপিটিপি মিশ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ

www.ajkerpatrika.com ড. মঞ্জুরে খোদা প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৬

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রধান প্রক্রিয়া হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ—অন্তত বাংলাদেশের মতো সংঘাতময়, অসহিষ্ণু, অবিশ্বাসের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দেশে। প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভারসাম্যমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল করতে হলে প্রচলিত এফপিটিপি (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) পদ্ধতির সঙ্গে পিআর (প্রপোরশোনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ) পদ্ধতি যুক্ত করা হলে ভোটারদের মতামতের ভারসাম্যমূলক অবস্থার প্রতিফলন দেখা যাবে।


বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল কতটা ভারসাম্যহীন, তার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ৪০.২১ শতাংশ ভোট পেয়েও আওয়ামী লীগ আসন পেয়েছে মাত্র ৬২টি, অর্থাৎ ২১ শতাংশ আসন। আর বিএনপি-জামায়াত জোট ৪৫.১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ২০৮টি, অর্থাৎ ৬৯ শতাংশ আসন। এখানে বিএনপি মাত্র ৪.৯৪ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগের চেয়ে ১৪৬টি বেশি, অর্থাৎ ২৩৫ শতাংশ বেশি আসন। এই হিসাবই বলে দেয় যে এফপিটিপি ব্যবস্থায় জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। এই ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার আসনের ক্ষেত্রেও প্রকৃত জনমতের একই ধরনের অন্যায্য প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেমন ধরা যাক, একটি আসনে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে যদি তাঁরা যথাক্রমে ২৭, ২৬, ২১, ১৭ ও ৯ শতাংশ করে ভোট পান, তাহলে যিনি ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনিই নির্বাচিত হবেন এবং ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধি’ হিসেবে গণ্য হবেন। যদিও তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট মোটেও পাননি। মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের হিসাবে তিনি অন্তত প্রদত্ত ভোটের ৫১ শতাংশ পাননি। এই ব্যবস্থায় একটি দল ৩০০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রতিটিতে ২০ শতাংশ করে ভোট পেয়েও একটি আসনও না পেতে পারে। সংগতই এই ব্যবস্থা মোটেও জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন নিশ্চিত করে না।


বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সংখ্যানুপাতিক পিআর না এফপিটিপি সিস্টেমে হবে, সেটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। লক্ষ করেছি, এই বিতর্ক নিয়ে বিরোধ যে পর্যায়ে গেছে, তাতে শিগগির সমঝোতার কোনো সুযোগ দেখছি না। নির্বাচনের কোনো পদ্ধতিই ত্রুটিমুক্ত নয়, তারপরও যে পদ্ধতিতে মানুষের ন্যূনতম অংশগ্রহণ থাকে, সেটাকেই গ্রহণ করা সমীচীন। পিআর পদ্ধতি ভোটের ভিত্তিতে সংসদে সব দলের অংশগ্রহণই নিশ্চিত শুধু করবে না, সরকারকে স্বৈরাচার ও কর্তৃত্বপরায়ণও হতে বাধা দেবে। তবে নির্বাচনকে সম্পূর্ণ পিআর বা সম্পূর্ণ এফপিটিপি না করে এই দুইয়ের মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করাটাকে যৌক্তিক মনে করি। জাপান এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। আমি মনে করি, জাপানের এই পদ্ধতি আমাদের জন্য উপযোগী।



বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর তালিকায় জাপান শীর্ষস্থান দখল করে আছে অনেক বছর ধরে। কিন্তু একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা ভূমিকা রাখে, তা জাপানের নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে তাকালে অনুধাবন করা যায়। জাপানের নির্বাচনী ব্যবস্থা শুধু একটি ভোটপ্রক্রিয়া নয়, বরং তা এক দীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্কার, অভিজ্ঞতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চার ফল। এটি এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো, যেখানে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উভয়ের সঠিক প্রতিফলন ঘটে।


জাপান বিশ্বের অন্যতম উন্নত এবং রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল একটি দেশ। এই স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা, যা সময়ের বিবর্তনে একদিকে যেমন আধুনিক হয়েছে, তেমনি গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে নাগরিকদের মতামতের সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করেছে। জাপানের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিছক একটি ভোটপ্রক্রিয়া নয়, বরং এটি এক সুসংগঠিত কাঠামো, যা দেশটির রাজনীতির মৌলিক ভিত্তি।


জাপানের আধুনিক নির্বাচনী ব্যবস্থার সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে, যখন মার্কিন দখলদারত্বে দেশটির সংবিধান সংস্কার হয় (১৯৪৭ সালের নতুন সংবিধান)। এটি একটি পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে সাধারণ জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এর আগে জাপানে সামন্ততান্ত্রিক ও সামরিক রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, যেখানে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ছিল সীমিত। যুদ্ধ-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার এই ইতিহাসকে একেবারে পাল্টে দেয়।


জাপানের সংসদকে বলা হয় ‘দ্য ন্যাশনাল ডায়েট’, যা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট; প্রথমটি হচ্ছে নিম্নকক্ষ (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস), যার আসনসংখ্যা ৪৬৫টি, মেয়াদ: ৪ বছর, সরকার গঠনের ক্ষমতা এই কক্ষের হাতে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে উচ্চকক্ষ (হাউস অব কাউন্সিলরস) আসন: ২৪৮টি, এর মেয়াদ ৬ বছর (প্রতি ৩ বছরে অর্ধেক আসনের নির্বাচন হয়)। এই কাঠামো আইন পাসে সহায়তা এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সংসদীয় কাঠামো যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ও লর্ডসের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও