-6859df6547545.jpg)
যুদ্ধ বিজয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়ার পর ইউরোপকে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ভাগ করতে গেলে পুঁজিবাদীদের নেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আরেকটি বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ধৈর্য, অর্থনৈতিক ও সামরিক মনোবল বিজয়ী শক্তিগুলোর মধ্যে ছিল না বলে সরাসরি বড় ধরনের সামরিক সংঘাত বা যুদ্ধের পরিবর্তে প্রকাশ্যে বা গোপনে হুমকি, প্রচারণা, গুপ্তচরবৃত্তি, গোপনে হত্যা এবং প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৪৬ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এ যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়েছিল। এ রাষ্ট্রগুলো হলো-রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজিস্তান।
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে পৃথিবীর বহু দেশে আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান, পালটা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত এবং ক্ষমতাসীন হন বহু সামরিক-বেসামরিক নেতা। রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধও চূড়ান্তভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।
কমিউনিজম রোধে ইসলামি অনুভূতিকে কাজে লাগানো হয়
দীর্ঘ ৪৫ বছরের স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকা কমিউনিজমের বিস্তার রোধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল, যার একটি ছিল ইসলামি দর্শন ও অনুভূতি ব্যবহার করা। এটি কোনো সরল বিষয় ছিল না; বরং শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রভাবকে দুর্বল করার জন্য ইসলামি গোষ্ঠী বা নেতাদের কাজে লাগানো হয়েছিল। এটি ছিল একটি জটিল, কিন্তু সুবিধাজনক পদ্ধতি, বিশেষ করে যেসব দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি ছিল, সেখানে এর প্রয়োগ হয়েছে নিখুঁতভাবে।
সোভিয়েত ইউনিয়কে মোকাবিলা করার নীতি
কমিউনিস্টরা ধর্মকে কোনোভাবেই প্রাধান্য দেয় না। চীনারা বলে ধর্ম আফিমের নেশার মতো। কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রায়ই ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষী হিসাবে বিবেচিত হতো। এর ফলে আমেরিকা এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবাঁধা শুরু করে, যারা কমিউনিজমকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি হুমকি হিসাবে দেখত।
ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট নিধন
ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট নিধন বলতে মূলত ১৯৬৫-৬৬ সালের কমিউনিস্টবিরোধী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে বোঝায়। এ সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি (পিকেআই) এবং তাদের সমর্থকদের ব্যাপকহারে হত্যা করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এতে ১০ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য কমিউনিস্ট পার্টিকে দায়ী করা হয়। এরপর সেনাবাহিনী কমিউনিস্টবিরোধী প্রচারণা শুরু করে এবং ব্যাপক ধরপাকড় ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ হত্যাকাণ্ডে শুধু কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরাই নন, তাদের সমর্থক, বামপন্থি নেতাকর্মী, মহিলা এবং চীনাদেরও হত্যা করা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং সুহার্তোর নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। এটি ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়ে আছে।
গণহত্যা
এএফপির খবরে সেসময় বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্টবিরোধী শুদ্ধির নামে সেনাবাহিনীর ‘ব্যাপক গণহত্যাযজ্ঞ’ চালাতে যাওয়ার বিষয়টি মার্কিন বাহিনী জানত। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত জাকার্তার মার্কিন দূতাবাসের এ সংক্রান্ত ৩৯টি নথি প্রকাশিত হয়। সেই সময়টায় স্নায়ুযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এসব নথিতে ওই সময়টা ও আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে অস্থির সময়ের নানা তথ্য উঠে এসেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যুদ্ধ ও সংঘাত