জাতি হিসেবে আমরা এতই নির্বোধ যে, কিসে আমাদের প্রাপ্তি, আর কিসে আমাদের গৌরব, তা বোঝার ন্যূনতম জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। জাতিগত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিচারে তামাম দুনিয়ার অনেকের চেয়ে আমরা যে অনেক এগিয়ে, সেটা গর্ব করে বলার সুযোগও যেন হারাতে বসেছি। ভুল রাজনৈতিক চর্চা, অসহিষ্ণু আচরণ এবং তথাকথিত ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কলুষিত করছে। যে কারণে চোখের সামনে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একে একে আমাদের গর্বের জায়গাগুলোকে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। এরই ধারাবাহিক চেষ্টার সর্বশেষ সংযোজন ১০ জুন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি ও তদসংলগ্ন অডিটরিয়ামে হামলা ও রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন ধ্বংস। হামলার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে অনেকেই হয়তো একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার চেষ্টা করবেন। আদতে তা মোটেই নয়। এ হামলা ও ভাঙচুর নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই; গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপর রাজশাহীর ঘোড়ামারা মহল্লার মিয়াপাড়ায় অবস্থিত বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে প্রশাসন প্রথমে কিছুদিন নড়েচড়ে বসলেও শেষ পর্যন্ত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করেছিল কি না, আমরা জানতে পারিনি। এ জঘন্য ঘটনার পর নিন্দা জানিয়ে আজকের পত্রিকাতেই আমি একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর এই পৈতৃক বাড়িতেই। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিয়াপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন ঋত্বিক ঘটক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতেই থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইয়ের মেয়ে আরেক বাঙালি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও।