
লোডশেডিং রোধে যা করণীয়
যত গরম ঘনিয়ে আসছে, বিদ্যুৎ নিয়ে আলাপচারিতা বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তায় অন্তত তিনটি আলোচনা চোখে পড়েছে, অবশ্য চোখের বাইরেও কম আলোচনা হচ্ছে না। আবহাওয়ার সাথে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যেমন ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, জলবায়ুর সাথেও তেমনি ঘনিষ্ঠতা আছে।
গরম কেমন পড়বে, তার ওপর নির্ভর করবে মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা। যদি গরম বেশি পড়ে, তাহলে এয়ারকুলার বা শীতাতপ যন্ত্রের বিপুল ব্যবহার আশা করা যায়। বেশি গরম অর্থ বেশি এসি, তার অর্থ বেশি বেশি বিদ্যুৎ - একদম ঐকিক সম্বন্ধ।
জলবায়ুর সাথে সম্পর্কটা একটু ঘুরপথে। বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর নির্ভর করে। জীবাশ্ম-জ্বালানি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে, এই গ্যাস বাতাসের তাপ-ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে গ্রহকে উষ্ণ করে তোলে। এভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বেড়ে যায়।
এই উষ্ণায়ন যদি কমাতে বা সীমার মধ্যে রাখতে চান, তাহলে আপনাকে জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। অতএব, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আপনাকে বিকল্প উৎসের খোঁজ করতে হবে। যেমন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আপনার নিঃসরণকে কমিয়ে দেবে। কিন্তু এমন জ্বালানির শক্তি-ঘনত্ব বা এনার্জি ডেনসিটি অত্যন্ত কম।
এত কম শক্তি-ঘনত্বের উৎস নিয়ে উৎপাতও কিন্তু কম নয়। অথচ তুলনায় জীবাশ্মের শক্তি-ঘনত্ব অনেক বেশি, ফলে অল্পতেই চাহিদা মেটে, দ্রুত পরিবহন করা যায়, এক দেশ থেকে আরেক দেশে বয়ে নেওয়া যায় – পাইপে বা জাহাজে – কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না।
পারদের ওঠানামা, কাজেই, গ্রিড-অপারেটর এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে এটার অর্থ লোডশেডিং। যদি বৈদ্যুতিক লোড বেড়ে যায়, আর উৎপাদন সীমিত থাকে, তাহলে সব লোডকে তো আর সরবরাহ করা যাবে না, তখন কিছু সংযুক্ত লোডকে ছেঁটে ফেলতে হয়, কমিয়ে দিতে হয়, একেই ‘লোডকে শেড করা’ বলে।
বেশি গরম পড়লেও তা-ই হয়। যখন বেশি বেশি ফ্যান চলবে, এসি চলবে, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। জোগান কম থাকলে তখন কাউকে কাউকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
বিভিন্ন প্রাক্কলনে এই গ্রীষ্মে লোড বাড়বে ১৮ হাজার থেকে সাড়ে-১৮ হাজার মেগাওয়াট বলে জানা যাচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন দফতর এই প্রাক্কলন করেছেন। এখন এই পুরো লোডকে সরবরাহ করা অসম্ভব নয়, খুবই সম্ভব। আপনাকে তখন সব বিদ্যুৎ-উৎপাদন কেন্দ্রগুলো একত্রে চালাতে হবে। সেটাও কি অসম্ভব? মোটেই না।