
গাজা গণহত্যা বন্ধে বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ জরুরি
গাজায় গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ১ আগস্ট তিনি গাজায় প্রবেশ করেন ইসরাইলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিকে সঙ্গে নিয়ে। তার সফর কিংবা ফাঁকা বিবৃতি নয়, গাজায় প্রতিদিন অকাতরে ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযান থামাতে হলে প্রয়োজন জরুরি ও সরাসরি বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ। হতাশাজনকভাবে তেমন প্রচেষ্টা অনুপস্থিত। বরং বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে এমন একটি অক্ষম, সংবেদনহীন, নিষ্ক্রিয় পরিস্থিতিতে, যেখানে সবাই চেয়ে চেয়ে গণহত্যা দেখছে। কেউ কেউ আগ্রাসী ইসরাইলকে সঙ্গত দিচ্ছে। অনেকেই হয়ে আছে বোবা দর্শক। বাস্তবে গণহত্যা বন্ধে প্রতিরোধমূলক ও কার্যকরী কিছুই করছে না কেউই।
গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানের শুরু থেকেই গণবিনাশের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করেছে জায়নবাদী অপশক্তি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই এ কথা বলছেন। অতএব, গাজায় যে বিপর্যয় চলমান, যা ইসরাইলি অবরোধের ফলে এখন চরম দুর্ভিক্ষের পঞ্চম ধাপে পৌঁছেছে এবং যা হয়তো আর ফিরে আসার মতো নয়, তা দেখে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এ পরিস্থিতি পূর্বপরিকল্পিত এবং জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠী সবসময় এমনটাই চেয়েছিল। এখন তা অবিকল সেভাবেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ এ বিপর্যয় রোধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষে আদৌ কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ করা হয়নি বা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বরং, তথাকথিত ‘মুক্তবিশ্ব’, ‘নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’ কিংবা ‘সভ্যতার মূল্যবোধে’র ধারক ও বাহকরা গাজায় অব্যাহত মানবিক বিপর্যয়কে উৎসাহিত করেছে, কারণ তারা ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতা থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দিয়েছে এবং তার যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘নিজেকে রক্ষার অধিকার’ নামে বৈধতা দিয়েছে। সুতরাং, তথাকথিত আধুনিক ও উন্নত আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ওপর বিস্ময়, উদ্বেগ, হতাশা বা বেদনা প্রকাশ করা শুধু যে অনেক দেরিতে হয়েছে তাই নয়, বরং তা লজ্জাহীন ও সুযোগসন্ধানীমূলকও হয়েছে বটে। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর অবস্থানও এ তালিকায় বোবা দর্শকের, যা ইতিহাসে একদিন নিকৃষ্ট, কাপুরুষোচিত ও কলংকিত আচরণরূপে চিহ্নিত হওয়ার যোগ্য।
গণহত্যার বিপরীতে গৃহীত নানা রকমের কৃত্রিম, লোকদেখানো প্রতিক্রিয়াগুলো কখনোই কোনো বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিচ্ছে না, যা ইসরাইলের মতো বিপথগামী রাষ্ট্রের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, এগুলো মূলত সত্যিকারের বা আন্তরিক নয়। এগুলো নিজেদের মুখ রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা-একটি করুণ প্রয়াস, যেন ভবিষ্যতে বিচার ও জবাবদিহির সময় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না ওঠে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকেই জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) ইতোমধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাধিক নির্দেশ জারি করেছেন, যার বাস্তবায়নের মানে হতো একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়া। এছাড়াও ICJ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি দখলদারত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।