পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি উন্নয়ন ও ব্রির গবেষণা কার্যক্রম

বণিক বার্তা এম আব্দুল মোমিন প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৫, ১১:২৮

পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক-দশমাংশ। সুতরাং এ অংশকে উন্নয়নের বাইরে রেখে দেশের সুষম উন্নয়ন অসম্ভব। বিষয়টি উপলব্ধি করে পাহাড়ের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যকর গবেষণা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।


আমাদের এ দেশের মোট আয়তনের শতকরা ১২ ভাগ পাহাড়ি এলাকা, যার শতকরা ১০ ভাগ শুধু রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—এ তিন পার্বত্য এলাকাজুড়ে অবস্থিত জমির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। এ অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিকাল থেকে পাহাড়ের গায়ে জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।


পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য জুমচাষের জন্য উপযোগী। এখানকার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জুমচাষে সম্পৃক্ত এবং এ অঞ্চলের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে তাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে বংশ পরম্পরায় জুমচাষ করে আসছে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই সারা বছর বিভিন্ন কাজে আত্মনিয়োজিত থাকে। পাহাড়ের ঢালে একটা ধারালো দা দিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে তার মধ্যে অনেক ধরনের ফসলের বীজ একসঙ্গে মিশিয়ে বুনে আবাদ করা হয়। পাহাড়ি জমির জঙ্গল কেটে রোদে শুকিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে নির্বাচিত জমিকে কৃষিজ উৎপাদনের আওতায় আনা হয়। আদি কৃষিপ্রথার এ পদ্ধতিকে এজন্য অনেকে জঙ্গল কাটা ও পোড়ানো কৃষি পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জুমচাষ একই জমিতে বছরের পর বছর ধরে অবিরামভাবে করা হয় না বিধায় একে স্থানান্তরিত কৃষি পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে এবং যারা জুম চাষ করেন তাদের বলা হয় জুমিয়া।


জুম থেকে কম মুনাফা আসা সত্ত্বেও অধিকাংশ জুমচাষী তাদের জীবনধারণের জন্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে জুমের ওপর নির্ভরশীল। জুমিয়ারা জুমে একসঙ্গে প্রায় ৩০-৩৫টি ফসলের আবাদ করে থাকেন। অনেক জুমচাষী আবার তাদের জুমে মাত্র ১৭-১৮টি ফসলও করে থাকেন। জুমে তাদের এ উৎপাদনযজ্ঞ সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এটা লক্ষণীয় যে এখন পর্যন্ত ধান, সবজি, অর্থকরী ফসল, ফল, মসলা ইত্যাদির জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় জুমিয়ারা জুমের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই পাহাড়ি এলাকার স্থানীয় জনগণ জুমচাষকেই খাদ্য ও জীবনরক্ষার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছে। বর্তমানে জুমের পতিত জমি থেকে তারা আদা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদির চাষ করছে। একসময় জুমিয়ারা জুম থেকে সারা বছরের প্রয়োজনীয় খোরাকি জোগাড় করতে সক্ষম হতো। এমনকি পরিবারের ভরণ-পোষণের পর যে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকত তা বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতেন। কিন্তু জুমিয়াদের মতে আজকাল জুমচাষ আর আগের মতো নেই, ফলন ভালো হয় না। এক বছর জুমচাষ করার পর ৮-১০ বছর জমিটি পতিত রাখা প্রয়োজন। এতে করে জুম চাষের জমিটির উর্বরতা পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে জুমচাষের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে এবং জমিটিও আগের মতো অধিক সময় পতিত রাখা যায় না। বলা বাহুল্য, জুমিয়ারা হচ্ছেন সবাই প্রান্তিক চাষী ও সাধারণভাবে হতদ্ররিদ্র। অধিকাংশ জুমিয়ারা খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিতে ভোগেন। তারা হচ্ছেন গ্রামীণ সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ যারা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতির শিকার। জুমচাষ করা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই তাদের টিকে থাকারও উপায় নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে জুমচাষ ভূমিক্ষয় ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এখনো তাদের ঐতিহ্য জুমচাষ ধরে রেখেছেন।


পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, বম, ম্রো, খিয়াং, খুমি, চাকসহ ১১টি নৃ-গোষ্ঠীসহ বাঙালিরা বসবাস করে আসছেন যাদের প্রধান পেশা কৃষি। এসব অঞ্চলের জুমচাষীরা সনাতন পদ্ধতিতে জুমচাষ করে থাকেন। এছাড়া উপযুক্ত উচ্চফলনশীল জাত ও উৎপাদন উপকরণ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করার কারণে তারা কাঙ্খিত ফলন পান না। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জুমচাষীদের জুমে উৎপাদিত ধানে তাদের বছরের মাত্র পাঁচ-সাত মাস চলে। বাকি সাত-পাঁচ মাসের খাদ্যের সংস্থানের জন্য বিভিন্ন কাজকর্ম, যেমন বয়ন, হস্তশিল্প, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রী, গাড়িচালনা, নার্সারি ইত্যাদি কাজ করে অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। অনুকূল পরিবেশ এলাকার মতো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সারা বছরের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে এবং জুমচাষ পদ্ধতি উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সীমিত পরিসরে ‘পাহাড়ি অঞ্চলে নেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত ধানের জাতের গ্রহণযোগ্যতা ও লাভজনকতা নির্ধারণ"কর্মসূচির অর্থায়নে পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের ঢালে তথা জুমে এবং পাহাড়ের পাদদেশে সমতলে গত তিন বছরে (জুলাই ২০১৭-জুন ২০২০) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং বর্তমানে রাজস্ব অর্থায়নে ওই গবেষণাকাজ অব্যাহত রয়েছে।


পাহাড়ি বিশাল এলাকাকে খাদ্য উৎপাদনের যথাযথ অংশীদার করার লক্ষ্যে জুমে পাহাড়িদের প্রচলিত সিস্টেমকে বিঘ্নিত না করে তাদের স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল আধুনিক আউশ বিআর২৬, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৩ ও ব্রি ধান৮৫ ধানের জাতের চাষ করা হচ্ছে এবং কৃষকরা জাতগুলোর তুলনামূলক উচ্চফলনশীলতার জন্য গ্রহণ করেছেন। ব্রি উদ্ভাবিত আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের গড় ফলনপ্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন টন যেখানে তাদের চাষকৃত স্থানীয় জাতের গড়ফলন প্রতি হেক্টরে দুই টন। আউশ মৌসুমে জুমে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ব্রি ধান৯৮ এবং ব্রি হাইব্রিডধান৭ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত জুমচাষে জুমিয়ারা কোনো সার ব্যবহার করেন না। কিছু প্রগতিশীল কৃষক ইউরিয়া সার ব্যবহার করলেও তা আবার কার্যকর ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে করেন না। সে পরিপ্রেক্ষিতে চাষকৃত ধানের পুষ্টি উপাদান সরবরাহের লক্ষ্যে সার ব্যবস্থাপনার ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং সঠিক সার প্রয়োগ পদ্ধতিও উদ্ভাবন করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও