
গাজার গণহত্যা, কাশ্মীরের কান্না: রাজনৈতিক দাবার ছক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে যখন বিশ্বপরিস্থিতি উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বৈশ্বিক জনমনে উদ্বেগ ও অশুভ সংকেতের জাল তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর এটি আরেক বড় সন্ত্রাসী হামলা। তবে ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের মাঝে যে মিল আছে, তারচেয়েও বড় মিল আছে তাদের প্রেক্ষাপটে। দুটি ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়।
এই নিন্দনীয় ঘটনার শিকড় আরও বেশি নিন্দনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিহিত— যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার রাজনৈতিক নাম দখলদারিত্বমূলক উপনিবেশ। আর এখানেই মিল কেবল ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের হামলায় নয়, আরও বেশি মিল গাজায় ও কাশ্মীরে, ইসরায়েলে ও ভারতে এবং নেতানিয়াহু ও মোদীতে।
ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের অধিবাসী উভয়েরই ভাগ্য বিপর্যয়ের শুরু ১৯৪৭-৪৮ থেকে। উভয়েই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার— একদিকে ইসরায়েল ও অন্যদিকে ভারত কর্তৃক। অথচ শুরুতে ইসরায়েল ও ভারতের মাঝে পার্থক্য ছিল বিপরীত দুই মেরুর মতো— ইসরায়েল পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের একটি সহিংস প্রকল্প, অন্যদিকে ভারত ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু দখলদারিত্বমূলক ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ ধীরে ধীরে তাদেরকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ ও আত্মার আত্মীয় করে তুলছে তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।
১৯৪৭-এ যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রস্তাব পাশ হয়, ভারত তখন অল্প কিছু অমুসলিম দেশের মধ্যে একটি ছিল যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আমলে ইসরায়েলকে বলেছিলেন ‘আক্রমণকারী জাতিরাষ্ট্র’ ও তাদের ‘দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার’ দাবি করেছিলেন।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ছিল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের। কিন্তু ভারতের নিজেরই ছিল ফিলিস্তিনের মতো আরেক অধিকৃত অঞ্চল— কাশ্মীর। স্বাধীনতা লাভে ইচ্ছুক কাশ্মীরকে পাকাপোক্তভাবে দখলে রাখার উদ্দেশ্য থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে তার যুদ্ধপরিস্থিতিতে ইসরায়েল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে।
২০১৪ সালে নরেদ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত-ইসরায়েলের সখ্য প্রকাশ্য ও নাটকীয় রূপ নিতে শুরু করে।
‘ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’-এর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাফা আহমেদ ‘জ্যাকোবিন’ সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধে (হোয়াই ফার-রাইট হিন্দুস লাভ ডেমোনাইজিং প্যালেস্টিনিয়ানস, ১৫ নভেম্বর ২০২৩) লিখেছেন, “প্রতিপক্ষকে দমন করতে হিন্দুত্ববাদও জায়নবাদের খেলার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করেছে ...।”
টাইম সাময়িকীতে (নভেম্বর ১৭, ২০২৩) ‘হাউ ইন্ডিয়া বিকেইম প্রো-ইসরায়েল’ শীর্ষক লেখায় নিকোলাস ব্ল্যারেল প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি খদ্দের।