ট্রাম্পের দুনিয়া যখন বিভিন্ন ‘দুর্গের এক সমাবেশ’

প্রথম আলো ইউভাল নোয়াহ হারারি প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫৬

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলোর বিস্ময়কর বিষয় হলো, মানুষ এখনো এসব নীতি দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। ট্রাম্প যখনই বৈশ্বিক উদারপন্থী ব্যবস্থার একটি ভিতে আঘাত হানছেন, তখনই খবরের শিরোনামে অভিঘাত ও হতাশা ফুটে উঠছে। সেটা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার দাবির প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন জানানো বা গ্রিনল্যান্ডকে বলপূর্বক যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে যুক্ত করার অভিলাষই হোক, কিংবা তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে আর্থিক দুনিয়া টালমাটাল করে দেওয়া হোক। তারপরও তাঁর নীতিগুলো এতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দুনিয়া সম্পর্কে তাঁর দর্শন এতটা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত যে এই পর্যায়ে কেবল স্বেচ্ছায় আত্মপ্রবঞ্চক হওয়া কোনো ব্যক্তি বিস্মিত হতে পারেন।


২.


উদারপন্থী ব্যবস্থার সমর্থকেরা বিশ্বকে দেখে থাকেন এমন একটি পারস্পরিক সহযোগিতার বন্ধনে, যেখানে সবাই লাভবান হন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে সংঘাত অনিবার্য নয়; কারণ, সহযোগিতা থেকে সবাই উপকার পান। এই বিশ্বাসের গভীর দার্শনিক শিকড় রয়েছে। উদারপন্থীরা যুক্তি দেন যে সব মানুষ কিছু অভিন্ন অভিজ্ঞতা ও স্বার্থ দ্বারা তাড়িত, যা সর্বজনীন মূল্যবোধ, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি রচনা করেছে। 


উদাহরণস্বরূপ, সব মানুষই রোগবালাইকে অপছন্দ করেন আর তাই সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার রোধ করা তাঁদের সবার অভিন্ন স্বার্থ। সে কারণেই চিকিৎসাবিষয়ক জ্ঞান বিনিময়, মহামারি দূরীকরণে বৈশ্বিক প্রয়াস এবং এসব কাজের সমন্বয় করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্য দিয়ে সব দেশই উপকার পেতে পারে। একইভাবে উদারপন্থীরা যখন বিভিন্ন দেশের মধ্যে চিন্তাভাবনা, পণ্য ও মানুষের প্রবাহের দিকে দৃকপাত করেন, তখন তাঁরা একে অনিবার্য প্রতিযোগিতা ও শোষণের বদলে পারস্পরিক উপকারের সম্ভাবনা হিসেবে দেখে থাকেন।


এসবের বিপরীতে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে দুনিয়ার প্রতিটি লেনদেনে হার-জিত আছে। তাই এই বিশ্ব হলো এমন একটি খেলার ময়দান, যেখানে এক পক্ষ জিতবে, আরেক পক্ষ হারবে; কিন্তু কোনোভাবেই সবাই লাভবান হবে না। সে কারণেই চিন্তাভাবনা, পণ্য ও মানুষের আদান–প্রদান মজ্জাগতভাবেই সন্দেহজনক বিষয়। 


ট্রাম্পের দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রতিষ্ঠান ও আইন আর কিছুই নয়, কেবল কিছু দেশকে দুর্বল ও বাকিদের সবল করার এক কৌশলমাত্র; অথবা সম্ভবত সব দেশকে দুর্বল বানিয়ে শুধু একদল দুষ্ট অথচ অভিজাত বৈশ্বিক নাগরিককে (কসমোপলিটন এলিট) সুবিধা দেওয়ার চক্রান্ত।



তাহলে ট্রাম্পের কাছে পছন্দনীয় বিকল্প কী? তিনি যদি বিশ্বকে তাঁর নিজের পছন্দমতো পুনর্গঠন করতে পারতেন, তাহলে তা কী রকম দাঁড়াত?


৩.


ট্রাম্পের আদর্শ দুনিয়া হলো অনেকগুলো ‘রক্ষণদুর্গের এক সমারোহ’, যেখানে বিভিন্ন দেশ একে অপরের থেকে আলাদা থাকবে আর্থিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক তো বটেই, এমনকি সত্যিকারের ইট-পাথরের প্রাচীর দ্বারা। এখানে পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত; বরং ট্রাম্প ও তাঁর মনোভাবাপন্ন জনতুষ্টিবাদীদের যুক্তি হলো, এহেন দুর্গ-প্রাচীর দেশগুলোকে অধিকতর শান্তি ও স্থিতিশীলতা এনে দেবে।


অবশ্যই এ চিন্তাচেতনায় গুরুত্বপূর্ণ একটিবিষয় অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের এটা শিখিয়েছে যে প্রতিটি দুর্গই সম্ভবত সবার চেয়ে একটু বেশি নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও ভূসীমা চাইবে নিজের জন্য এবং তা তার প্রতিবেশীর মূল্যে। মানে প্রতিবেশীকেই ছাড় দিতে হবে। সর্বজনীন মূল্যবোধ, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আইনের অনুপস্থিতিতে কীভাবে এসব প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্গগুলো তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করবে?


ট্রাম্পের কাছে অবশ্য সহজ সমাধান আছে: সংঘাত এড়াতে দুর্বলদের উচিত হবে সবলদের সব দাবি মেনে নেওয়া। এ রকম মতবাদ অনুসারে, দুর্বলেরা যখন বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকার করে, তখনই সংঘাত দেখা দেয়। এ কারণেই যুদ্ধ বাধার জন্য সব সময় দুর্বলেরাই দায়ী।


ট্রাম্প যখন রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেন, তখন অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না যে কীভাবে তিনি এ রকম ভ্রান্ত মনোভাব পোষণ করেন। কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে তিনি রুশ প্রচার-প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এর সহজতর ব্যাখ্যা আছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও