একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথরেখা

প্রথম আলো রেহমান সোবহান প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩

আন্দোলনের রাজনীতি থেকে দল গঠন


১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ দুবার এবং বিএনপি দুবার সরকার গঠন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দুই দল তাদের ক্ষমতার মেয়াদে গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়নে লক্ষণীয়ভাবে কোনো কাজ করেনি;বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করা এবং বিজয়ীর জন্যই সব—এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরস্থায়ী করার জন্য ব্যস্ত ছিল।


দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জুলাই গণ–অভু৵ত্থানের পরে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির সরকার গঠন করার মতো সম্ভাবনাও অনেকে দেখছেন। সাধারণভাবে জনগণের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ যে তারা উন্নততর গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে ফিরে আসবে কি না। গণ–অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার ও গণতন্ত্রচর্চা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেক বক্তব্য মানুষের মধ্যে সমাদৃত হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির ফলে ক্ষমতার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সে জায়গা দখল করেছেন বিএনপির কর্মীরা। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি। স্থানীয় পর্যায়ের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ আছে। সাধারণ মানুষের এই অসন্তোষ বিএনপিকে আমলে নিতে হবে।


পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তারা একটি নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা সামনে এনেছে। সেখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজেদের অগ্রণী ভূমিকার জন্য ছাত্ররা শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাতে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসতে না পারে, সে জন্য তাঁরা যৌক্তিকভাবেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। একটি নতুন, আরও ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে তাঁরা সত্যিকারের সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।



অধ্যাপক ইউনূস যে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন, ছাত্ররা সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের একটি অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।


চার দশক ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন ছিল। এই দ্বিদলীয় আধিপত্য জাতীয় রাজনীতিতে একধরনের ‘গোত্রীয় বিভাজন’ তৈরি করেছে। অধ্যাপক ইউনূস ২০০৭ সালে এমন একটি তৃতীয় শক্তি গঠনের চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু অনুপযুক্ত সময় ও কৌশলের অভাবে সেটি আগে বাড়েনি। তবে শুরুতেই ওই প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেলেও দুই দলের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তাকে তা বাতিল করে দেয় না। জামায়াতে ইসলামী অবশ্য এ ধরনের আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি; কিন্তু দলটির রাজনীতি এখন পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শিক গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে, গোটা জনগোষ্ঠীকে ঘিরে নয়। বর্তমানে দলটি হয়তো আরও বৃহৎ পরিসরে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর আশা করছে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠার অঙ্গীকার করছে।


আমাদের পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এনসিপির উত্থানের মধ্যে রয়েছে অভিনবত্বের আকর্ষণ এবং অতীতে শাসনকার্যে জড়িত থাকার কোনো দায় বহন না করার সুবিধা। এই পুঁজি কাজে লাগাতে হলে এনসিপির উচিত হবে ইতিহাস নিয়ে পুরোনো বিতর্কে জড়ানোর পরিবর্তে নিজেদের ভবিষ্যতের দল হিসেবে উপস্থাপন করা। এ পর্যন্ত কিছু ছাত্রনেতা সংবিধান পুনর্লিখন এবং দ্বিতীয় রিপাবলিক ঘোষণা নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের মূল ভিত্তি—চার মৌলিক নীতিকে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে দলটির পাঁচ দফা ঘোষণাটি যখন প্রকাশিত হচ্ছে, তখন এটিকে মূলত শব্দগত একটি খেলা বলে মনে হচ্ছে। এটি এমন কিছুই বলছে না, যা ইতিমধ্যে থাকা মূল সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোতে নেই। যেমন ‘বহুত্ববাদ’ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্নিহিত ধারণা। ‘সাম্য’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ সমাজতন্ত্রের ধারণার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাংবিধানিক দ্বান্দ্বিকতায় জড়িত হওয়ার এই উদ্যোগ জাতীয় লক্ষ্যকে পরিচালিত করা মৌলিক মূল্যবোধগুলোকে পুনর্নির্ধারণ করার চেয়ে ইতিহাসের পুনর্ব্যাখ্যার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা বেশি পরিচালিত বলে মনে হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও