বুধবার সকালে দিলু রোডের বাসা থেকে বের হতেই দেখি, তেজগাঁওমুখী সড়ক স্থবির হয়ে আছে। কোনো যানবাহন চলছে না।
খবর নিয়ে জানলাম, ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। সড়ক আটকে রাখায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ঢাকার কোনো এক সড়ক অচল হয়ে পড়লে শহরের বড় অংশ অচল হয়ে পড়ে।
অবরোধকারীদের মধ্যে সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ (টিএসসি) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
তাঁদের দাবি যৌক্তিক না অযৌক্তিক, সেই বিতর্কে না গিয়েও বলব, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার বা কর্তৃপক্ষ আগে কথা বলে কেন সমস্যার সমাধান করল না?
একই দাবিতে তাঁরা আগেও আন্দোলন করেছিলেন।
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ঘটনাটি আরও উদ্বেগজনক। গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের আগে উপাচার্য ছিলেন মিহিররঞ্জন।
‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে তাঁকে পদচ্যূত করা হয়। এরপর এলেন মোহাম্মদ মাছুদ। সহ উপাচার্য শরিফুল আলম।
শিক্ষকেরাও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন, কেউ উপাচার্যের পক্ষে। কেউ সহ উপাচার্যের পক্ষে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যিালয়ে চাপা উত্তেজনা চলছিল।
১৮এপ্রিল ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র কর শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপক্ষ বললেন, কুয়েটে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চলবে না।
তাদের পেছনে প্রশাসনেরও কারও কারও সায় ছিল বলে অভিযোগ আছে। যারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করছেন, তারাও একধরনের রাজনীতি করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে।
২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৬ দফা দাবি পেশ করেছিলেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল। পৌনে দুই মাসেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান নেন এবং হলের তালা ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়েন।
কুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রথমে ৬ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। এখন বলছেন, এক দফা; অর্থাৎ উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষকেরা সাড়া দেননি। এরপর তারা নিজেরাই তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন।
একটি ঘটনা কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই মাস অচল করে রাখে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুয়েট।
এখানে শিক্ষার্থীদের যেমন দায় আছে, তেমনি দায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও। শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে বাসে চড়ে ঢাকায় এলেন।
তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। আর কুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের মধ্যেই সমাধান খুঁজে পেয়েছে। ৩৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।
বুধবার শিক্ষার্থীরা লিখিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যেহেতু ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, যেহেতু ভিসি নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি।’
আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যাটি উপলব্ধিও করতে পারেনি।
যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন, তখন সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে আগামী ২ মে আবাসিক হল এবং ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বাভাবিকভাবে এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থার ওপর।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
তাদের দাবি, ওই মিছিলে ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে হামলা করে। কথায় বলে এক হাতে তালি বাজে না। দুই পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।