
ট্রাম্পের শুল্কনীতি : উদ্বেগ ও শঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেছেন। এ শুল্কনীতি অনুযায়ী, ৬০টির মতো দেশ ও অঞ্চলের ওপর বাড়তি শুল্ক (রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ) আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এসব দেশ ও অঞ্চলগুলোর একটি। নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে ৯ এপ্রিল থেকে। তবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত মার্কিন শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য, বিশেষ করে পাদুকা ও ওষুধ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। তবে প্রধান রপ্তানি পণ্যটি হলো পোশাক। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকসামগ্রীর অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল। প্রাথমিক হিসাব থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক দাঁড়াবে ৩৭ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পরিমাণ শুল্ক পরিশোধ করে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করার পর এগুলোর চাহিদা হ্রাস পাবে। কারণ, বর্ধিত শুল্কের ফলে এসব পণ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পাবে। পোশাক পণ্যের বিষয়টি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ, বাংলাদেশে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে বহু শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ পণ্যের চাহিদা পড়ে গেলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মারাত্মক বেকারত্ব ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পরিস্থিতি যে কী রকম ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা বোঝা যায় ৮ এপ্রিলের একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। ঢাকার সাভারের এসেন্সর ফুড ওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টস নামের প্রতিষ্ঠান চলতি সপ্তাহে তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে জাহাজীকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত রোববার সকালে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ না করতে নির্দেশনা পায় প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়া পণ্য রপ্তানি করে বলে জানা গেছে। তাদের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আরও কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশের পণ্য সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা পেয়েছে। কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মূল্যছাড় চেয়েছে বলেও জানা গেছে। তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের কয়েকজন রপ্তানিকারক দৈনিকটিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশ স্থগিত কিংবা মূল্যছাড় দাবির সংখ্যা এখনো তুলনামূলক কম। তবে দু-একদিনের মধ্যে অনেক ক্রেতা তাদের চলমান ক্রয়াদেশ নিয়ে নির্দেশনা দিতে পারে।
ক্রেতারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, জানতে চাইলে বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক দৈনিকটিকে বলেছেন, ‘রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারছি, যুক্তরাষ্ট্রের বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট ও গ্যাপ বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের ৩৭ শতাংশ শুল্ক বহন করতে বলেছে। ক্রয়াদেশ স্থগিত করার নির্দেশনাও আসছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই শুল্কারোপের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। ২ এপ্রিল নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তিনি বিশ্বের সব আমদানিকারক দেশের ওপর গড়ে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন। পাশাপাশি বেশকিছু দেশের জন্য বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানে যথাক্রমে ২৬ ও ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্কারোপ হয়েছে। চীনে পালটা শুল্কসহ মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ।
বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কারোপের বিষয়টি ৩ মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিটি সোমবার পাঠানো হয়েছে। এতে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোসহ নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও আলোচনার জন্য সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান। মোটা দাগে বলা যায়, অধ্যাপক ইউনূস যেসব পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি হ্রাস করা। এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে পালটা শুল্কের চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং সম্ভবত বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রার্থিত ৩ মাস সময়ের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে সাড়া দেন। ৩ মাস সময় প্রয়োজন হবে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যগুলোর পুনর্বিন্যাস এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ ও পণ্য বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে। যার ফলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে এবং এর ফলে শুল্কায়নের হারও হ্রাস পাবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি
- শুল্ক আরোপ