তৌহিদি জনতা কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী

www.ajkerpatrika.com আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৬

৫ আগস্টের পর থেকে আমরা ঢাকাসহ সারা দেশেই জাস্টিসের নমুনা দেখেছি। কিছু লোক একত্রে জড়ো হয়ে একটি গুজব ছড়িয়ে, কোনো ব্যক্তির ওপর চড়াও হয়ে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরে ফেলে। আবার বর্তমানে পলায়নপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সম্পত্তি দখল করে নিজেদের আয়ত্তে নেওয়া অথবা ভাঙচুর করাসহ পুড়িয়ে দেওয়াও মব জাস্টিস। এটা তিন-চার মাস ভালোই চলেছে সারা দেশে, এর ওপর সরকারের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যেহেতু পুলিশ অকার্যকর ছিল, তাই সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে এসব সহ্য করে নিতে বাধ্য হয়েছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে। মব জাস্টিস থেকে এখন কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া গেছে, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার, সংবাদপত্রে সুনির্দিষ্ট করে লেখা, সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও প্রশাসনের কিছুটা আগ্রহের কারণে মব জাস্টিস মোটামুটি কমে এসেছে।


মব জাস্টিস যখন কমতির দিকে তখন অন্য একটি ফেনোমেনা দেখা দিয়েছে আমাদের সমাজে, সেটা হলো তৌহিদি জনতা। এই তৌহিদি জনতা কারা, তারা কী করতে চায়, কী করছে—এ সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ করে একদল মানুষ ধর্মীয় লেবাস পরে, ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে কোনো সভা-সমাবেশ পণ্ড করে দেয়, কোনো মানুষকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসে—এভাবে চলছে বেশ কয়েক মাস যাবৎ। তৌহিদি জনতা মানুষের ওপর বা কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর চড়াও হয় ধর্মীয় লেবাসে।

কিছু সংঘবদ্ধ মানুষ একত্র হয়ে নিজেদের ইসলামপন্থী মনে করে। তারা নিজেদের ইসলামের ধারক-বাহক ও রক্ষক মনে করে। তাই নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে নিজেদের চোখে যেটাকে খারাপ মনে করে, সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তির ওপর চড়াও হয়ে আঘাত করে। এই তথাকথিত তৌহিদি জনতা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার কোনো ধার ধারে না, রাষ্ট্রের কোনো আইনকে তোয়াক্কা করে না। তারা মনে করে তাদের বিচারই ইসলামের বিচার, তারা যদি এই বিচার না করে তাহলে দেশ ও সমাজ ইসলামবিমুখ হয়ে যাবে, দেশে ইসলাম বলে কিছু থাকবে না!

প্রথমেই আমরা দেখলাম মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করা হলো তৌহিদি জনতার নামে। তারপর দেখলাম রোজার সময় একেবারেই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত, বেড়া দেওয়া ঘর থেকে মানুষকে বের করে এনে, অপমান করাসহ কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে রোজা থাকে না বলে। এসব তারা করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। সাধারণ মানুষ তাদের কিছু বলতে সাহস পায় না। এরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে তারা অন্যদের ওপর চড়াও হয়। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া এই লোকেরা নিজের ভুল স্বীকার করেছে। যাদের অপমান করেছিল, তাদের সঙ্গে নিয়ে নতুন ভিডিও করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাতে এই আবহের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই হয় নারীর পোশাক, নারীর চলাফেরা অর্থাৎ নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এদের দ্বিতীয় টার্গেট হলো বাঙালি সংস্কৃতি। সুস্থ ধারার গানবাজনা, জারিসারি গানের আয়োজন, নাটক কিংবা বিভিন্ন পার্বণ অনুযায়ী কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে এই তৌহিদি জনতা সেটাকে নন-ইসলামিক বলে প্রতিহত করতে যায় মারমুখী হয়ে।
তারা সব সময় পবিত্র ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে। তাদের বেশভূষা ইসলামি। আমাদের দেশের সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করে তারা ইসলামকে সমুন্নত করছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, তারা ইসলামের মূল বাণী থেকে অনেক দূরে। জোর করে ইসলাম প্রচার করা যায় না—এই কথা তারা একেবারেই মানতে রাজি না। তাদের ভাষ্যমতে, সমাজে যে প্রচলিত অনিয়ম তাদের চোখে পড়বে, সেটা যদি তারা প্রতিরোধ না করে, তাহলে তারাও এইসব পাপকর্মের ভাগীদার হবে। তাই অন্তত তারা পরকাল পাওয়ার জন্য এইসব করে যাচ্ছে!


বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিলের নামে ডাহা মিথ্যা কথা প্রচারিত হয়, সেদিকে এইসব তৌহিদি জনতার কোনো খেয়াল নেই। যেমন, এক নামীদামি ইসলামিক বক্তা বললেন, ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইতালিতে কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি। একজন বললেন বড় বড় ব্রিজ তৈরি হয় জিন দিয়ে! কেউ বলেন, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া রোগীকে পানি পড়া দিয়ে ভালো করে দিয়েছেন, কেউ আবার করোনার ওষুধ আবিষ্কারের ফর্মুলা দেন! নানান আজগুবি কথাবার্তা বলে মানুষকে সাময়িক উত্তেজিত করেন তারা। আসলে এইসব আজগুবি কথাবার্তা বলার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সাইবেরিয়ার জঙ্গলের ১২০০ কিলোমিটার গভীরে মানুষের কান্নার শব্দ, আটলান্টিকের কয়েক শ কিলোমিটার নিচে মানুষের কথাবার্তা শোনা যায়—এইসব আজগুবি কথাবার্তা ইসলামের নাম করে বলা হয়! তৌহিদি জনতা বা সাধারণ মানুষ এর কোনো প্রতিবাদ করে না। ওয়াজ মঞ্চের সামনে বসে থাকা হাজার হাজার মানুষ ‘মারহাবা’ ‘মারহাবা’ বলে এইসব মিথ্যা বানোয়াট কথা শোনে। সঠিক কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যার জন্য তৌহিদি জনতা তেমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমাদের ধারণা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও