সামনে বর্ষা, চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতায় আর হাবুডুবু না খাক

প্রথম আলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ওমর কায়সার প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৬

চট্টগ্রাম মহানগরকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সহযোগিতা নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। এই প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন হলে বন্দর নগরের বেশি কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধতার কবল থেকে রেহাই পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই স্বপ্নে দিন গুনছে এখানে বসবাসকারী প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।


এখন বসন্তকাল। শুষ্ক মৌসুমের দিন শেষ হতে চলেছে। এবার বৃষ্টির মৌসুম এলে আগের মতো জনজীবন ডুবিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলে স্বপ্ন দেখছে তারা। কিন্তু পরিবেশবাদী, নগর পরিকল্পক ও অভিজ্ঞজনেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শেষ হলে প্রথম কয়েক বছর হয়তো মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে আবার পুরোনো জটিল অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। কারণ, জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ বর্জ্য। চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চলছে চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল অবস্থা। এটাকে শৃঙ্খলায় আনতে না পারলে, সুষ্ঠু নিয়মের মধ্যে আনা না গেলে ক্রমবর্ধমান বর্জ্যের বিশাল স্তূপ নদী, খালগুলো অচিরেই ভরাট হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। ফলে প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।


স্থানীয় একটি পত্রিকার খবর অনুযায়ী চট্টগ্রামে বছরে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। ৯ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টন বর্জ্য সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করলেও বাকি প্রায় ১০ লাখ টন বর্জ্য নালা-খালে পড়ছে। সেখান থেকে যাচ্ছে কর্ণফুলীতে। শুধু নগর নয়, কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন গ্রাম এলাকার বর্জ্যও এসে পড়ছে খাল ও নদীতে। বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এই সব বর্জ্যের বেশির ভাগই অপচনশীল পলিথিন, প্লাস্টিক। শুধু মানুষের ব্যবহার্য বর্জ্য নয়, কর্ণফুলীর তীরে তীরে কাপ্তাই থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার জুড়ে অন্তত ৩০০টি কারখানা বা শিল্প স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৮৪টি কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিকের মিশ্রণে সীতাকুণ্ডের কুমিরা খালের পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে। এতে করে জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে রোগে।



সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের দিকে নজর না দেওয়ায় কুমিরা খালে কারখানা বেড়েই চলেছে। ফলে বর্জ্যও বাড়ছে। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের কারণে খনন করা খালগুলো ভরাট হতে খুব বেশি দিন সময় লাগার কথা নয়। ইতিমধ্যে আমাদের পরিবেশ–প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে এই সব বর্জ্য। দূষণের কবলে পড়ে কর্ণফুলী, আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলায় খাল নদীগুলোও ভরাট হয়েছে। ক্ষীণ হয়েছে এসবের স্রোতোধারা। শুকনা মৌসুমে সেচ ও গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির উৎস কমছে অথচ বর্ষায় শুরু হয় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি।


কর্ণফুলীর দুই তীরের নগর ও গ্রামের মানুষের একই রকম ভোগান্তি শুরু হলো। বর্জ্যের কারণে ক্রমেই মুমূর্ষু হয়ে পড়ছে নদীটি। তার জীববৈচিত্র্য কমছে। ইতিমধ্যে ৩৫ প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে এই নদীর কোল থেকে। মাছ কমে যাওয়া মানে শুধু জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়া নয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শত শত মানুষের জীবিকা। বহু বছর ধরে কর্ণফুলীর তীরেই গড়ে উঠেছে ৫০টির মতো জেলেপল্লি। কর্ণফুলীর দূষণে সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত এই সব পেশাজীবী মানুষ।


গ্রামের খালগুলো মানুষের বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে। আর শহরের খালগুলো ভরাট হয়ে এখন রাস্তাও দখল করেছে। শহরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে কিংবা মোড়ে বর্জ্যের ভাগাড় পরিপূর্ণ থাকে। অনেক সড়কের অর্ধেক অংশ জুড়ে দিনরাত পড়ে থাকে আবর্জনা। ১৮৬৩ সালে নগর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ১৬২ বছর অতিক্রম করেছে চট্টগ্রাম মহানগর। দেড় শ বছরের বেশি সময়ে একটা নিজস্ব বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি আমরা। এটা আমাদের জন্য লজ্জা ও দুঃখের ব্যাপার।


নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পের নাম ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন। এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এত বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের পর যদি জলাবদ্ধতার স্থায়ী কোনো সমাধান না হয়, তবে তা হবে সত্যিকারের এক দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। এই দুর্ভাগ্য সহ্য করা যাবে না। সুতরাং আগে থেকেই আমাদের সতর্ক হওয়া খুব জরুরি। জলাবদ্ধতার নিরসন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন। নতুন রাষ্ট্রকাঠামোতে সব ক্ষেত্রে সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে। সেই আওয়াজ যেন এ রকম মৌলিক বিষয়গুলোকেও স্পর্শ করলেই সংস্কার মানুষের চোখে মূর্ত হয়ে উঠবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও