সংখ্যালঘুর স্বার্থরক্ষায় সংখ্যাগুরুর দায়বদ্ধতা

বিডি নিউজ ২৪ আলমগীর খান প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪৪

বাঙালি জাতির আত্মমুক্তির জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ফসল হিসেবে এক রক্তাক্ত গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। লড়াইটা প্রধানত বাঙালি জাতির আত্মমুক্তির জন্য হলেও অবাঙালি ও আদিবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষও এতে অংশগ্রহণ করেছেন। এসব জাতীয় লড়াইয়ে সকল মানুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ না করলেও এবং কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও সকল রাষ্ট্রের ইতিহাসেই একে সর্বজনীন ও শতভাগ মানুষের লড়াই হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সাধারণ বোধবুদ্ধিতে এবং বড় অংকের দশমিক হিসাবেও এটাই উচিত। বাংলাদেশের বেলায়ও তাই স্বাভাবিক। এই হলো বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রের ও জাতির ঐক্যবদ্ধ অস্তিত্বের সূত্র।


যেহেতু রাষ্ট্র কোনো একশিলা পদার্থ নয়, এতে বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য স্বাভাবিক এবং সেটাই তার শক্তির পরিচায়ক। রাষ্ট্র হচ্ছে ট্রাইবালিজমের ওপরের স্তর। ট্রাইব একশিলা গোষ্ঠীর মতো। সামান্য পার্থক্যের জন্য ট্রাইব ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই পার্থক্যের জন্য এক ট্রাইব আরেক ট্রাইবের সঙ্গে মারামারি ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পোশাকের, বিশ্বাসের, ভাষার, আচার-অনুষ্ঠানের সামান্য হেরফের হলেই ট্রাইবের মধ্যে সন্দেহ ঢুকে পড়ে এবং তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। শিকার ও সংগ্রহভিত্তিক অর্থনীতিতে ট্রাইবের অস্তিত্ব নির্ভর করে এইরকম একশিলা হওয়ার মধ্যে।


কিন্তু জাতি ও রাষ্ট্র ট্রাইব থেকে অনেক বড়। বিভিন্ন ট্রাইবকে তাদের ছোট ছোট পার্থক্যক এমন পর্যায় পর্যন্ত কমিয়ে আনতে হয় যখন সেগুলো আর সংঘর্ষের রূপ নেয় না, বরং বৈচিত্র্যময় ঐশ্বর্য হয়ে ওঠে। যারা তা পারে তারাই জাতি গঠন করে। ট্রাইবগুলো বহু সংগ্রামময় জীবনের পর, বহু কাব্যগাথা ও ধর্মীয় মানসসম্পদ সৃষ্টির পর এবং ইতিহাসের এক দীর্ঘ পথ পরিক্রমণের পরই কেবল জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের সক্ষমতা অর্জন করে। অনেকে আবার তা পেয়েও হারায়। বহু প্রাণ ও আত্মত্যাগের পর পুনরায় তা জয় করতে হয়। এভাবেই পৃথিবীতে এখনকার সব রাষ্ট্র। এভাবেই স্বাধীন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।



এক ধর্ম, এক ভাষা, এক নৃগোষ্ঠী পরিচয় সম্বলিত জাতিরাষ্ট্র এখন কল্পনামাত্র এবং বাংলাদেশও তা নয়। আধুনিক রাষ্ট্রকে তার একক জাতিসত্তার পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। আধুনিক রাষ্ট্র মাত্রই তা বহু জাতির, বহু ভাষার, বহু বর্ণের, বহু মতের ও পথের— কারও কারও সংখ্যাধিক্য থাকা সত্ত্বেও। এরকম একটি আধুনিক রাষ্ট্র গঠন ও চলমান রাখা কঠিন— এর অন্যতম রক্ষাকবচ যুগোপযোগী শিক্ষা। রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে আধুনিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক, শৈল্পিক ও বৌদ্ধিক উদ্ভাবনের সঙ্গে পরিচয় করাতে না পারলে এ ধরনের রাষ্ট্র ভঙ্গুর অবস্থায় টিকে থাকে যার প্রকাশ ঘটে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে ও অস্থিতিশীলতায়। যা কখনো স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হয় না। নাগরিকের সহনশীলতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, পরস্পরের প্রতি সহমর্মিমতা এগুলো স্থিতিশীলতা অর্জনে রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি।


তারপরও দ্বন্দ্ব-সংঘাত রাষ্ট্রে অনিবার্য এবং তা অগ্রগতির চালিকাশক্তিও। ওই দ্বন্দ্ব সব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নয়— বৃহৎ বিষয় নিয়ে। ভাষিক অধিকার, ধর্ম পালনের অধিকার, সাংস্কৃতিক চর্চার অধিকার ইত্যাদি নিয়ে সংঘর্ষ গুরুত্বপূর্ণ আর তার মীমাংসা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়। আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ অর্থনৈতিক— যা শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির। অতএব অর্থনৈতিক সুবিচারের জন্য, শিক্ষার উন্নতির জন্য, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার জন্য, পরিবেশ রক্ষার জন্য ইত্যাদি আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজে সংঘর্ষের উপাদান। এসব দ্বন্দ্বের মীমাংসা রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিতে থাকে। বাংলাদেশে এসব সমস্যা এখনও প্রকট। অথচ মানুষকে মাতিয়ে রাখা হয় সংকীর্ণ বিষয় দিয়ে।


উল্লেখ্য, গণতন্ত্র কোনো রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি ও সংকট দুই-ই। যে কথাটা উইনস্টন চার্চিল আরও সুন্দর করে বলেছেন এভাবে, “অন্য সবরকম শাসনব্যবস্থার হিসাব বাদ দিলে গণতন্ত্র সবচেয়ে খারাপ ধরনের ব্যবস্থা।” অর্থাৎ সব শাসনব্যবস্থাকে হিসেবে ধরলে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের তুলনায় খারাপ গণতন্ত্রও শতগুণ ভালো। এ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ও অগণতান্ত্রিক দিকটা হলো এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। যার ফলে সংখ্যালঘিষ্ঠের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্য তৈরি হয়। যেহেতু এক ভোট বেশি পাওয়া পক্ষের সিদ্ধান্তই সব, গণতন্ত্রের নামে তারা অনেক কিছু সংখ্যালঘিষ্ঠের ওপরে চাপিয়ে দিতে পারে। এই অসামঞ্জস্যের কারণেই বাংলাদেশে ১৯৯০-এ অর্জিত গণতন্ত্র ২০১৪ সালে এসে ফ্যাসিবাদে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও