দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা এতই জরুরি?
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একইসঙ্গে সংসদের মেয়াদ থাকবে চারবছর ও সংসদ সদস্যের প্রার্থীর বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করার জন্য সুপারিশ তাদের। প্রার্থীর বয়স ২৫ থেকে নামিয়ে ২১ বছর করার কোনো যুক্তির ব্যাখ্যা তারা দিয়েছে কি না এমন জানা নেই। যেমনি সংসদের মেয়াদ চার বছর কেন তাও বোঝা মুশকিল। প্রস্তাব বিষয়ে এমন মুশকিলে বোধ করি অনেকেই পড়েছেন। যেমন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা নিয়ে আলোচনা ব্যাপক। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সমস্যা কি,সমস্যা থাকলে উত্তরণের জন্য কি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টই একমাত্র বিকল্প? প্রশ্নগুলো আসতেই পারে।
বলা হচ্ছে,এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নে দুর্বলতা আছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে যাচাইবাছাই বিশ্লেষণের অধিক সুবিধা পাওয়া যাবে। আইনপ্রণয়নে স্বচ্ছতা থাকুক এবং নির্ভুল ও সঠিক আইন প্রণয়ন হোক এটা সর্বসম্মত চাওয়া। এই জনচাহিদাগুলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে পূরণ হবে এমন নিশ্চয়তা কতটুকু আছে,বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে এর প্রয়োজনীয়তাও আলোচনায় আসতে পারে।এককক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বহাল রেখে কি এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষ হবে ৪০০ সদস্যকে নিয়ে। এরমধ্যে ৩০০ হবে আসনভিত্তিক অর্থাৎ এখন যেভাবে হচ্ছে সেভাবে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যসংখ্যা ৫০জন থেকে ১০০জন এ উন্নীত করার কথাও বলা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবে। তবে এই ১০০জন নারীকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। তাদের নির্বাচিত হতে হবে ৩টি আসনে লড়াই করে।অর্থাৎ নির্বাচনী এলাকায় পুরুষ ও নারীর অনুপাত হবে ১:৩। একজন পুরুষকে এক তৃতীয়াংশ এলাকার ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করলেই চলবে। অন্যদিকে একজন নারীকে চাইতে হবে তিনটি আসনের ভোটারদের ভোট।
এবার আসা যাক,পদমর্যাদার বাস্তব দিকে।সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে নারী সদস্যের পদমর্যাদাকে একজন সাধারণ এমপির সমান রাখার কথাই বলা হয়েছে।যা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কাগজে কলমে সমান থাকলেও তারা প্রকৃত অর্থে উড়ন্ত পাখির মতো। সংসদে গিয়ে হাততোলা ভোট দান এবং করমুক্ত গাড়ি সুবিধাসহ কিছু সুযোগ-সুবিধায় সীমাবদ্ধ। তাদের ভোটারের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক থাকে না তেমনি উন্নয়নেও সাধারণ এমপির মতো কোনো ভূমিকা থাকে না। শুধু তাই নয় প্রস্তাবিত তিন আসনে এক নারী এমপি হলেও এর ব্যত্যয় ঘটবে এমন ভাবার কারণ নেই।
আশির দশকে বলা হতো ৩০সেট অলংকার। পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে ৫০ সেট অলংকারই পেয়েছে সংসদ,এর বেশি কিছু অর্জন হয়েছে কি? নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ১০০জন নারী রীতিমতো তিনগুণ লড়াই করে সংসদে নির্বাচিত হবেন। কারণ তাদের লড়তে হবে তিনটি আসনে। মনে হতেই পারে স্বর্ণের দাম বাড়ার মতো আগামী সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার ব্যয়ও শতগুণ বেড়ে যাবে।
আবার প্রশ্ন আসে,এই সংখ্যা ৫০থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার পক্ষে কি যুক্তি থাকতে পারে। জবাব হতে পারে নারীর সমতা রক্ষায় এই উদ্যোগ।এরও যৌক্তিকতা কতটুকু।রাজনৈতিক দলগুলোতে যদি নারীর কাজের সুযোগ বাড়ে তাহলে এমনিতেই নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে যাবে।বাস্তবতা হচ্ছে,দলগুলো এদিকে নজর দেয় খুবই কম। প্রতিটি দলের এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা আছে বাংলাদেশে।আজ পর্যন্ত এটাই পূরণ হয়নি।আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো দলে কিছুটা চোখে পড়লেও ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে পরিচিত দলগুলোতে নারীর উপস্থিতি হতাশাজনক।