ট্রাম্প যুগে কেমন হবে বিশ্ব বাণিজ্য
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আলোচনায় সরগরম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বাজারগুলো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির একটি নতুন তরঙ্গের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিবাসন থেকে বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই তিনি এসেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানোর ঘোষণা নিয়ে। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দর্শন যে শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই নয়, বরং বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের গতিপ্রকৃতিতে নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে পারে, সেই পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে এখন থেকেই। যেহেতু অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ভূ-রাজনৈতিক (জিওপলিটিক্স) বন্দোবস্ত একে অপরের পরিপূরক, তাই ট্রাম্প ২.০ পর্বে সাপ্লাই চেইন পুনর্বিন্যাসের সম্ভাব্য দিক ও পরিণতি বিশ্ব বাণিজ্যের মানচিত্রকে আমূল বদলে দিতে পারে। এ নিবন্ধে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্কের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব অন্বেষণসহ বৈশ্বিক নয়া সাপ্লাই চেইনে বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ট্রাম্প ২.০-এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শননির্ভর নীতি কাঠামো পর্যালোচনা
ট্রাম্প ২.০-এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শননির্ভর নীতি কাঠামোর এ পর্যালোচনায় প্রথমে তার মৌলিক আদর্শকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জাতীয়তাবাদ, সীমান্ত নিরাপত্তা ও কঠোর অভিবাসন আইন, যার মাধ্যমে তিনি আমেরিকার জাতীয় স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করবেন। মূল্যবোধের পুনঃসংজ্ঞায়ন করতে বিশ্বায়নকে মূলত মার্কিন কর্মসংস্থান কমিয়ে দেওয়ার কারণ হিসাবে দেখানো হতে পারে। এর ফলে দেশীয় উৎপাদন ও শ্রমশক্তি পুনর্গঠনের মাধ্যমে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ ‘ইকোনমিক ন্যাশনালিজম’ চাঙা করা হতে পারে। এ ধরনের নীতির প্রভাবে পুরোনো মিত্র ইউরোপ বা জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোগত সম্পর্ক বজায় রাখা হলেও চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তির সঙ্গে বৈরী ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার হতে পারে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অতীতের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনি সমর্থকদের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে মার্কিন উৎপাদন খাতকে সুরক্ষামূলক বাণিজ্যনীতি, করছাড় এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ সহায়ক পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়ার সম্ভাবনা উঠে আসে। আমেরিকান উদ্ভাবন ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (R&D) বিনিয়োগে বিশেষ ভর্তুকি বা করছাড়ের ব্যবস্থা করা হতে পারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত গাড়ি, বায়োটেক, উদীয়মান প্রযুক্তি, এমনকি এআই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হতে পারে। অভ্যন্তরীণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে ও সৃজনকৃত কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ট্রাম্পের করনীতি, অভিবাসন সীমিতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বিকাশে আর্থিক ও পরিবেশ খাতে নিয়ন্ত্রণ কমানো হতে পারে। তার প্রশাসন আমেরিকান কোম্পানি ও শ্রমবাজারকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উচ্চ শুল্কারোপ বা শুল্ক বৃদ্ধি করে বিদেশি প্রতিযোগীদের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে উচ্চ শুল্কের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হতে পারে। এছাড়া, উচ্চ শুল্ক আর বাণিজ্য চুক্তি পুনঃআলোচনার মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানি ও দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা গ্রহণ করা হতে পারে। এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিকে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করা এবং ভোক্তাদের মধ্যে ‘দেশি পণ্য ক্রয়ে’র মনোভাব গড়ে তোলা।
ট্রাম্প ২.০-এ বাণিজ্যযুদ্ধ ও কৌশলগত বিবাদ আরও বাড়তে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। বড় অর্থনীতির দেশগুলো থেকে সাপ্লাই চেইন সরিয়ে আনতে বা নতুন কাউকে শক্তিশালী করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তার ফলাফল হবে গভীর ও বহুমাত্রিক।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি