গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধার ও নির্বাচনের অভিযাত্রায় সেনাবাহিনী

জাগো নিউজ ২৪ মোস্তফা কামাল প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০২

কথার পাণ্ডিত্য বা রাজনৈতিক স্বার্থে এখনও সেনাবাহিনী নিয়ে হালকা কথা চর্চা লক্ষণীয়। রাজনীতিতে কারণে-অকারণে কোনো কিছু নিয়ে লঘু-গুরু মন্তব্যকে দোষনীয় মনে করা হয় না। বলে দেয়া হয়- রাজনীতির মাঠে কতো কথাই হয়, সব ধরতে নেই। এছাড়া রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কিন্তু ধর্ম, বিজ্ঞান, সশস্ত্রবাহিনী নিয়ে রাজনীতির মতো মন যা চায় তা বলতে নেই।  দেশের এবারের সামগ্রিক অনিবার্য পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেসি সক্ষমতা নিয়ে এখনো মাঠে আছে সেনাবাহিনী। আর আছে বলেই সম্ভাব্য অনেক বিপদ থেকে রক্ষা।


জননিরাপত্তা, অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ,  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারসাজি রুখে দেয়া, মিলকারখানা সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা, সড়ক-মহাসড়ক বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, বিদেশি কুটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ সেনাবাহিনী যেভাবে করে যাচ্ছে তা বিবেকবানরা উপলব্ধি করছেন মর্মে মর্মে।  ঘটা করে এসবের কোনো প্রচার নেই। সেনাবাহিনী প্রচারে অভ্যস্থও নয়। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা-পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারের পুলিশি কাজও করে চলছে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিশ্বসভার সদস্যদের প্রতিক্রিয়ায়ও । যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জনগণের ওপর দমন-পীড়নকে রোধ করতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা একটি ইতিবাচক ঘটনা। জাতির পরম আস্থা ও ভালবাসার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠার সঙ্গে দেশ গঠনেও নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকার একটি নতুন দৃশ্যায়ন ঘটলো এবার।


এবারের পট পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কী রকমের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হয়েছে, কতো সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ হয়েছে, কতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে সরকারি সংস্থা অথবা অফিস সংক্রান্ত জটিলতা হয়েছে অনেকেরই এ সংক্রান্ত ধারনা নেই। দ্রুত গতিতে কোনো প্রচার বা হাকডাক ছাড়াই সেনাসদস্যরা সেগুলো ফয়সালা করেছে। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধানও করেছে। বড়দিন, পূজা, মাহফিল, ওরস, রাসমেলা, নবান্ন উৎসবসহ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে কী দায়িত্ব তারা পালন করেছে গণমাধ্যমের কাছেও সেসব তথ্য নেই। কাজগুলো সচরাচর পুলিশের। কিন্তু, পুলিশবাহিনীর দুর্গতির কারণে সেনাবাহিনীকে চালাতে হয়েছে এসব কর্মধারা। তা বিনা বাধায় বা নিমিসে হয়নি। কাজগুলো করতে গিয়ে সেনা সদস্যদের যন্ত্রণা ও আহতের হিসাব বেশ দীর্ঘ। গণআন্দোলনের পূর্বাপর সময়ে দেশের পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকের অজানা। এ সময়টাতে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের হাত থেকে স্থানীয় নিরীহ জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর কেবল বিশেষ যৌথ অভিযান নয়, জীবনবাজি রেখে কাজ করতে হয়েছে। এখনও করছে। শতে শতে কেএনএফ সদস্য ও তাদের  সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে। স্বয়ংক্রিয়সহ নানা ধরনের বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ, সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে। এসব কাজ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য নিহতও হয়েছেন। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধানের কাজও করেছে।



গেল বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবীর অফিসাররা যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে কোনো হাকডাক বা শো-ডাউন ছাড়াই। যার  সুবিধা পেয়ে আসছে গোটা দেশ। বাহিনীটির এ অবদান ইতিহাস হয়ে থাকবে। কাজ ও দায়িত্ব বিচেনায় দেশে দেশে বিভিন্ন বাহিনী ও মহল কিছু বিশেষণ ধারন করে। তা বাংলাদেশেও আছে। এখানে সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক। তার মানে এই নয় যে আর কারো বিবেক নেই। সম্বোধনটি আসলে এ পেশার প্রতি বিশেষ আদর ও সম্মানের বিষয়।  এভাবে আইনজীবীদের বলা হয়  ’লার্নেড ল ইয়ার’। শিক্ষকদের ডাকা হয় ‘মানুষ গড়ার কারীগর’ নামে। আলেম-ওলামাদের সম্মান করা হয় হযরত, হুজুর, মোহতারাম ইত্যাদি সম্বোধনে। আর পুলিশের সাথে যোগ করা হয় ‘জনগণের বন্ধু’। এসব আদর ও সম্মানের মর্যাদা কে কতোটা সংরক্ষণ করতে পেরেছেন তা বলা বা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। সেনাবাহিনী তার ’দেশপ্রেমিক’ বিশেষণের সম্মান অক্ষরে অক্ষরে রাখতে পেরেছে তা বিশ্বব্যাপী আলোচিত-প্রশংসিত। একটি রক্তাক্ত পরিস্থিতি কেবল মোকাবেলাই করেনি সাহসী মধ্যস্ততায় চমৎকার ফয়সালা রচনায় সেনা প্রধান, তার কলিগ ও বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা ছিল অনেকের কাছে অকল্পনীয়। সেনাবাহিনীর এমন ভূমিকাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ চিহ্নিত করছেন ম্যাজিক নামে। ধর্ম-কর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এটি ওপরওয়ালার রহমত।  প্রকৃতিবাদীদের কাছে ন্যাচার অব প্রেয়ার। আর জনগনের কাছে সেটিই দেশপ্রেম। সেনাবাহিনীর ৫ আগস্ট ও পূর্বাপর  ভূমিকা দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।


সেনাবাহিনী সেদিন কেবল রাজনৈতিক ফয়সালায় ভূমিকা রাখেনি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও দেশপ্রেমের সাক্ষর রেখেছে। এমন কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে।  দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশও পাঠিয়েছে। গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের পর এখন সুষ্ঠু –অবাধ নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর অভিযাত্রার আকাঙ্খার কথা উঠে এসেছে বাহিনীটির প্রধানের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে। দেশি বিদেশি কয়েকটি গণমাধ্যমে জেনারেল  ওয়াকার উজ জামান কথার মধ্যে কোনো মেদ না রেখে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে সোজাসাপ্টা বলেছেন- সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না। ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে পাশে থাকার কথাও বলেছেন। এই সময়ে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। অশান্তির পর দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিশ্চিত এক সঙ্গে কাজ করলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের আত্মবিশ্বাস ও অঙ্গীকারের পর সামনে একটি সুন্দর-সুষ্ঠু –অবাধ –নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ না জেগে পারে না।


এর বিপরীতটা হলেই বাধে বিপত্তি। দম্ভ, অহঙ্কার, স্বেচ্চাচার মাত্রাগতভাবে বাড়বাড়ন্ত হলে কী পরিণতি ভুগতে হয় তার দৃষ্টান্ত দেশে-বিদেশে অনেক রয়েছে। কখনো কখনো পরিবার-পরিজনকেও বাকি জীবন কাফফারা গুনতে হয়। সেই আতঙ্কে ৫ আগস্ট বাহিনী প্রধানসহ পুলিশের মহাপরাক্রমশালী কর্মকর্তাদের হাল অবস্থা গণমাধ্যমের কল্যানে সাধারণ মানুষেরও জানা। দেয়াল টপকে, লুঙ্গি ড্যান্সে, হেলিকপ্টারে বা রিক্সায় সাধারণ মানুষ সেজে পালানোর কিছু ঘটনাও প্রকাশ হয়েছে। একমাত্র ছাট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনার ভারতে চম্পট দেয়ার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদসহ বাঘা বাঘা পুলিশ কর্মকর্তাদের গুরুচরণ দশা এবং প্রাণভয়ে পালানোর কথা গোপন থাকেনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও