তকমার রাজনীতি
আওয়ামী লীগের আমলে সরকারের সমালোচক বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেভাবে রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত এমনকি জঙ্গি তকমা দেয়া হয়েছে, একইভাবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কারো কোনো বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকার বা তাদের অংশীজনদের সমালোচনামূলক হলে তাকে বলা হচ্ছে স্বৈরাচারের দোসর বা আওয়ামী লীগের দালাল। বলা হচ্ছে: ‘এতদিন কোথায় ছিলেন!’ অর্থাৎ এতদিন কেন সমালোচনা করেননি।
শুধু রাজনৈতিক বিষয়-আশয় নয়, নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক সমস্যা যেমন ঢাকার রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম, নিত্যপণ্যের দাম বেশি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি—এসব নিয়েও কেউ যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রাগ-ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেন— তাকে তার পরিচিতজনরাই এসে প্রশ্ন করছেন, আপনার আপার আমলে কি ঢাকায় জ্যাম হতো না? আগে কি জিনিসপত্রের দাম কম ছিল? আগে কী গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা ছিল না? ইত্যাদি। তার মানে, আগে যা যা হয়েছে, তা এখন হতে অসুবিধা নেই বা আগে হয়েছে বলে এখনও সেটা হওয়া জায়েজ!
সম্প্রতি বগুড়া ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দুই কর্মীর হাতকড়া পরে বাবার জানাজায় অংশ নেয়ার ছবি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়। এর মধ্যে একজন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম রব্বানী। বাবার জানাজায় অংশ নিতে তাকে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। এরপর পুলিশি পাহারায় তিনি বাবার জানাজায় অংশ নেন। এসময় তার এক হাতে হাতকড়া ছিল। তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে জানাজায় অংশ নেয় পুলিশ।
আরেকজন রাজশাহীর বাঘা আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কালাম আজাদ। তাকেও বাবার জানাজায় অংশ নিতে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় এবং তিনিও হাতকড়া পরা অবস্থাতেই জানাজায় অংশ নেন— যে ছবি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে।
এ নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। বলেছেন অপরাধী যত বড়ই হোক, অন্তত নামাজের সময় হাতকড়া খুলে ফেলা যেত। যেহেতু আসামির দুই পাশে পুলিশ ছিলই, অতএব জানাজার নামাজ থেকে আসামি পালিয়ে চলে যাবে, সেটি খুব সহজ নয়। বস্তুত মানুষ বিষয়টিকে মানবাধিকার ও নীতি-নৈতিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ও বলার চেষ্টা করেছেন। পক্ষান্তরে পুলিশের যুক্তিও আছে। যেমন তারা মনে করেছেন যে, হাতকড়া না থাকলে আসামির পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।