বাংলাদেশের অর্থনীতির বিজয়

ঢাকা পোষ্ট ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১

‘বিজয়’ শব্দটিকে আমরা প্রায়শই রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখি। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান ক্রান্তিকালে, একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় যখন সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সচেষ্ট, অর্থনৈতিক বিজয় বিষয়টিও আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষত এবারের বিজয় দিবসে। সেখানে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই অর্থনৈতিক বিজয় লাভের পন্থাগুলো কী?



বিজ্ঞাপন



তবে সে প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে যে বিষয়টি, তা হচ্ছে এই বিজয়ের পথে অন্তরায়গুলো কী। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, এসব অন্তরায়ের কিছু কিছু আছে আপাতদৃষ্ট, কিছু কিছু মৌলিক। যেমন, মূল্যস্ফীতিকে একটি আপাত অন্তরায় বলা যেতে পারে, আবার অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার দলনকে একটি মৌলিক বাধা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিজয়ের পথে যে আপাত অন্তরায়গুলো রয়েছে তার প্রথমেই রয়েছে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য। এ দেশের ৪ কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একটি অপুষ্টির শিকার। এ দেশে প্রতি ২০০০ লোকের জন্য একজন চিকিৎসক আছেন এবং প্রতি আড়াই হাজার মানুষের জন্য একজন সেবিকা।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে আয় এবং সম্পদের অসমতা সর্বজনবিদিত। হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বা অর্থপাচারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে, অর্থ ও বিত্ত কয়েকটি মানুষ এবং পরিবারে কুক্ষিগত ছিল। মোটাদাগের উপাত্তের দিকে যদি তাকাই, তাহলে আয়ের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ যেখানে দেশের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যায়, সেখানে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে দেশজ আয়ের ৩৮ শতাংশ।


মানব উন্নয়নের নানান সূচকেও এমন বৈষম্য বিদ্যমান। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেখানে প্রতি হাজারে ৪৯, সেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রতি হাজারে ২৫। আঞ্চলিক বৈষম্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, বরিশালে সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৫ শতাংশ, সিলেটে সেটা ৬০ শতাংশ।



বৈষম্য শুধু ফলাফলেই নয়, সুযোগের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। যেমন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুযোগে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। শিক্ষায় সরকারি এবং বেসরকারি ধারা, বাংলা এবং ইংরেজি মাধ্যম, বিত্তবান এবং বিত্তহীনদের জন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রবণতার মাধ্যমে শিক্ষা সুযোগে একটি বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে।


একইভাবে স্বাস্থ্যখাতে ত্রি-ধারা ব্যবস্থা বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুযোগের ক্ষেত্রেও একটি বিশাল বৈষম্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সেবার পরিমাণ যেমন অপ্রতুল, তেমনি তার মানও খুব নিচু। সাধারণ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুবিধা পান না।


অন্যদিকে বিত্তবানেরা স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের জন্যে বিদেশে পাড়ি জমান। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো মানবিক অধিকার এবং মৌলিক মানবিক চাহিদা বলয়ে এ জাতীয় বৈষম্য অগ্রহণযোগ্য। তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির তিন-চতুর্থাংশের যেখানে আন্তর্যোগ সেবায় লভ্যতা আছে, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ৫৫ শতাংশ মানুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের তেমন মানুষের অনুপাত হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৩ শতাংশ ঘরে কম্পিউটার আছে এবং ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ এ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জানেন না।


বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যেও ফলাফল ও সুযোগের মধ্যে অসমতা রয়েছে। যেমন, উচ্চতম শিক্ষাস্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তির হার যেখানে ১৭ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মধ্যে সে সংখ্যাটি হচ্ছে ২৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণের হার যেখানে ৮১ শতাংশ, নারীদের মাঝে সে সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। জ্যেষ্ঠ এবং মধ্যমস্তরের নির্বাহীদের মাঝে নারীর অনুপাত হচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে মুঠোফোনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মাঝে তফাত হচ্ছে ২৯ শতাংশ। আন্তর্যোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৩৩ শতাংশ পুরুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করেন—নারীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যাটি হচ্ছে ১৭ শতাংশ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও