জিকা ভাইরাস : শঙ্কা ও প্রতিকার
ঘটনা-১
বাড়িতে মিসেস পলির বাচ্চা হওয়ার পরে দেখা গেল, বাচ্চার মাথা শরীরের তুলনায় বেশ ছোট এবং হাসপাতালে নিয়ে আসার ২ দিন পরেই বাচ্চাটা মারা যায়।
ঘটনা-২
মিসেস ফারজানার ২৫ সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা দিলো বাচ্চার মাথা বয়সের তুলনায় ছোট। তাকে জানানো হলো বাচ্চা গর্ভেই মারা যেতে পারে বা বেঁচে থাকলেও অনেক জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ঘটনা-৩
মিসেস অনিমার বাচ্চা ছোট মাথা নিয়ে ৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে বেঁচে থাকলেও বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না।
এ ধরনের সমস্যার রোগীর সংখ্যা কম হলেও একদম বিরল না। বরং বিভিন্ন সূত্রমতে এবং গবেষণা বলে আগের তুলনায় বাড়ছে। যেসব কারণে গর্ভস্থ শিশুর এ সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো জিকা ভাইরাস সংক্রমণ।
এছাড়া রুবেলা (Rubella), সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus), টক্সোপ্লাজমা (Toxoplasmosis), হারপিস ভাইরাস (Herpes simplex virus-HSV), সিফিলিস (Syphilis)-এ আক্রান্ত মায়ের বাচ্চা, গর্ভবতী মায়ের প্রচণ্ড ভিটামিন স্বল্পতা এবং কেমিক্যাল পয়জনিং বা বাচ্চার স্নায়ুগত সমস্যার জন্য মাইক্রোসেফালি (Microcephaly) নিয়ে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে পারে।
জিকা ভাইরাস (Zika Virus) মশাবাহিত একটি রোগ, যা কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ফ্ল্যাভিভাইরাস (Flavivirus) পরিবারের অন্তর্গত এবং এডিস মশা দ্বারা ছড়ায়, যা ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া জ্বরের মতো রোগের জন্যও দায়ী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, জিকা ভাইরাস প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় একটি বানরের রক্তের নমুনায় পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়ায় মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এটি আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে মাইক্রোনেশিয়ার ইয়ার দ্বীপে ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে একটি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে।
তবে, এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ২০১৫ সালে ব্রাজিল থেকে। এরপর থেকে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুর মাইক্রোসেফালি (ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক) এবং স্নায়ুর অবসজনিত রোগ গুলেন-বারি সিনড্রোম (Guillain–Barré syndrome) সম্পর্কে জানা যায়। এরপরই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাস সংক্রমণ মানবজাতির জন্য হুমকি বলে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। রক্তের নমুনায় ভাইরাসের অ্যান্টিজেন এবং এর বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়। ২০২৩ সালে এই রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গু সন্দেহে রক্তের নমুনা পরীক্ষায় ঢাকায় ৩ মাসে এ পর্যন্ত ৮ জন ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গবেষণায় এসব রোগীর বাড়ির আশেপাশের এডিস মশার নমুনাতেও জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানা গেলেও এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ব্রাজিলে। তবে লাতিন আমেরিকাতেই এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
জিকা ভাইরাস প্রধানত এডিস মশার কামড়ের (এডিস ইজিপ্ট [Aedes aegypti] এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস [Aedes albopictus]) মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। তবে এখন বলা হয় দিন বা রাত যেকোনো সময় এটি কামড়াতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জিকা ভাইরাস