আনুপাতিক পদ্ধতির ভোট: নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা কী বলছে

প্রথম আলো আলতাফ পারভেজ প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৩৬

বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্ন ধীরে ধীরে মাঠে গড়াচ্ছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক বসাবসি শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতও আসছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে মনোযোগ পেল নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের আলাপ-আলোচনা-মতামত। এটা স্বাভাবিক। কারণ, একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। এটাই হতে যাচ্ছে আগামীর মূল আকর্ষণ। 


ইতিমধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে সমাজে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল পদ্ধতি হিসেবে একে পছন্দের কথা বলছে। একই সঙ্গে এ রকমও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, আনুপাতিক পদ্ধতির ভেতর দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের বিপক্ষ শক্তিগুলো জাতীয় রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেতে চলেছে কি না? এ উদ্বেগ সামাল দিয়ে কীভাবে আলোচিত এই সংস্কারের পথ বাধামুক্ত করা যায়—সে নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবতে হবে এখন।


বর্তমান পদ্ধতি ও আনুপাতিক পদ্ধতির মধ্যে ‘নতুন উদ্বেগ’


বাংলাদেশের এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন প্রার্থী বিপক্ষ ভোটের চেয়ে কম পেয়েও জিততে পারেন; যদি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিভিন্ন মার্কায় বিভক্ত থাকেন। ধরা যাক, একজন প্রার্থী ১ লাখ প্রদত্ত ভোটে ৪০ হাজার পেলেন, আর তাঁর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে ৬০ হাজার (২৫+২০+১৫) ভোট পেলেন। এ রকম ক্ষেত্রে প্রথমজন জয়ী হয়েছেন বলেই ধরা হয়। এতে জাতীয় পার্লামেন্টে ওই নির্বাচনী এলাকার যিনি প্রতিনিধি হন, তিনি আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠের বাছাই নন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার কার্যত সেখানে প্রতিনিধিত্বহীন থাকেন। কিন্তু এভাবেই চলছে বহুকাল। সংস্কার করা না হলে এ ব্যবস্থাতেই সামনে ভোট হতে পারে। 


দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এটা অনুমান করা যায়, চলতি ব্যবস্থা বহাল থাকলে আসন্ন ভোটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। জনসমর্থন ও সাংগঠনিকভাবে তারা অন্য দলগুলোর চেয়ে এখন এগিয়ে আছে। তবে বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো চাইছে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। এমনকি বিএনপির অনেক পুরোনো জোট-সহযোগীও ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন চায়। এ রকম হলে তারা লাভবান হতে পারবে বলে মনে করছে। এই ‘লাভে’র চিন্তায় কোনো অন্যায় নেই। 



কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন পর্যন্ত সবারই আনুপাতিক পদ্ধতিতে পার্লামেন্টে কমবেশি আসন পাবে বলে অনুমান করা যায়। তবে এ ধরনের ‘সংস্কারে’ আওয়ামী লীগও ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে—যদি তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া না হয়। বিএনপি কর্মীরা সামাজিক পরিসরে আনুপাতিক পদ্ধতির বিরোধিতা করতে গিয়ে এ রকম ‘বিপদে’র কথা বলছেন। তাঁদের এই বক্তব্য এক অর্থে অমূলক নয়। গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তির বিএনপির উদ্বেগ নিয়ে ভাবার দায় আছে।


আওয়ামী লীগের যে প্রথাগত ‘ভোটব্যাংক’ তাতে বর্তমানের বিরূপ অবস্থায় পুরোনো পদ্ধতিতে দলটি যে সংখ্যায় আসন আশা করতে পারে—আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হলে আসন-হিস্যা সেই তুলনায় বাড়বে। এর বাইরে আনুপাতিক পদ্ধতিতে এই দলের ভিন্ন লাভও আছে। 


এই মুহূর্তে পুরোনো আসনভিত্তিক ভোটে নৌকা মার্কার পক্ষে অনেক জায়গায় প্রার্থী হতে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন এই দলের প্রার্থীরা। কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয়ভাবে কেবল মার্কাকে সামনে রেখে ভোট হলে লীগ তাদের এখনকার সাংগঠনিক সংকট এড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে। 
■ বাংলাদেশের চলমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন প্রার্থী বিপক্ষ প্রাথীদের চেয়ে কম ভোট পেয়েও জিততে পারেন।


■ শ্রীলঙ্কায় একজন ভোটার ভোট দেওয়ার সময় পছন্দের দল বাছাই করেন এবং একই সময় পছন্দের দলের প্রার্থীদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাছাই করেন।


■ নির্বাচনী ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের কারণে নেপালে নারী ও নিচুতলার মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বেড়েছে। 
তবে এখনো কোনো ধরনের সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি। ফলে ওপরের অনুমানগুলো কল্পনাপ্রসূত বলা যায়। এখানে আনুপাতিক পদ্ধতির কোন মডেল বেছে নেওয়া হবে, তা কেউ জানে না এখনো। ফলে মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে এখনো।


এ রকম ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে যে দুটি দেশে নিরীক্ষা হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতাও খতিয়ে দেখা যায়। আনুপাতিক পদ্ধতির পুরো সুফল পেতে এ রকম অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আরও সহায়ক সংস্কার দরকার আছে কি না, সেটাও ওই দুই দেশের সংস্কারকদের কাছ থেকে চাইলে আমরা জানতে পারি। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের এ বিষয়ে অর্জিত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিপুল।


শ্রীলঙ্কা যেভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচন করে


এটা সবার জানা, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের মতো একাধিক ধর্ম ও জাতির দেশ। জাতি হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিদের সঙ্গে ১৫ শতাংশের তামিল সমাজ পুরোনো পদ্ধতির ভোটে পেরে উঠত না। ভোটে জাতি ও ধর্ম পরিচয় যুক্ত হয়ে পড়ে বিধায় বৌদ্ধ-সিংহলিদের সঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান তামিলরা অনিবার্যভাবে কোণঠাসা থাকত। একপর্যায়ে আনুপাতিক পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান খুঁজেছে দেশটি। যদিও সেই সমাধান মূলত পার্লামেন্ট নির্বাচনে কাজ করছে। সংসদ ও প্রেসিডেন্ট—দুটিই থাকলেও নির্বাহী ক্ষমতায় এ দেশে শেষোক্ত পদেরই দাপট। 


এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্টে আসন ২২৫। এর মধ্যে দেশকে ১৯৬ আসনে ভাগ করে আনুপাতিক পদ্ধতিতে সেসবে প্রার্থীভিত্তিক সরাসরি ভোট হয়। এই ১৯৬টি আসন দেশটির ৯ প্রদেশকে ২২টি ‘নির্বাচনী জেলায়’ ভাগ করে বণ্টিত হয়। এই বণ্টন হয় দুভাবে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও