লুণ্ঠনমূলক রাজনীতিই বৃদ্ধির কারণ
পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির প্রতিক্রিয়ায় প্রায়ই গ্রামীণ জীবনযাত্রার ঘটনা মনে পড়ে। তখন গ্রামের প্রায় সবাই কৃষক, না হয় কৃষিশ্রমিক ছিলেন। গ্রামের মানুষ খাল-বিল, পুকুর ও নদী-নালায় মাছ ধরত। বাড়িতে শাকসবজি ও ফল-মূলের বাগান ছিল। বাড়ির আশপাশের ছোটখাটো জঙ্গল থেকে রান্নার জ্বালানি পেত। বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও পশু-প্রাণী পালন হতো। ধান, চাল, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ ও রসুন হতো।
কোনো কিছুই কিনতে হতো না, নুন ও কেরোসিন ছাড়া। তাঁতিরা কাপড় বুনানো, কামাররা কৃষি যন্ত্রপাতি বানানো এবং কুমাররা মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানানো, মাঝি নদী পারাপার ও জেলেরা মাছ ধরার কাজ করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত। কৃষকরা এদের পণ্য বা সেবা গ্রহণ করত ধানের বিনিময়ে। পণ্য বা সেবার মূল্য ছিল না।
কিন্তু চাহিদা ছিল। চাহিদা ও জোগান নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য বা সেবার মূল্যবৃদ্ধি দ্বারা বেশি বেশি টাকা-কড়ি করার মতো কোনো তত্ত্ব তখনো গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেখা দেয়নি। পণ্যের বাজার বলে কিছু ছিল না। পণ্য/সেবা একে অপরের মধ্যে বিনিময় হতো। তারা কেউ ক্রেতা বা বিক্রেতা ছিলেন না। আশ্বিন-কার্তিক মাসে কৃষকের হাতে পাট বিক্রির টাকা আসত এবং মাংস কিনত। মৌসুম জুড়ে বাড়িময় মাটির পাতিলে রান্না করা সস্তায় কেনা ইলিশ সুগন্ধ ছড়াত। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি, এই সেই স্বনির্ভর অর্থনীতি। সেখানে লুণ্ঠন এবং শোষক ও শোষিতের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। লুণ্ঠনমুক্ত শোষণ ও বৈষম্যহীন সেই গ্রামীণ সমাজে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা স্ফীতির কোনো ধারণাই ছিল না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতি
- সাম্প্রতিক রাজনীতি