জেন–জিদের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের রূপান্তরের যাত্রা
জেন–জিদের নিয়ে সবাই আমরা কথা বলছি আজকাল। আগেও বলেছি কিন্তু এখনকার আলোচনাটা হচ্ছে অনেক উপলব্ধির সঙ্গে, বিশেষ করে হঠাৎই যখন এই প্রজন্মটা চলে এসেছে দেশ এবং সমাজের নেতৃত্বের জায়গায়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০-১২ পর্যন্ত যদি ধরি জেন–জিএর জন্মসাল—এদের বয়স এখন ১৫ থেকে ২৯–এর মধ্যে।
সম্প্রতিকালে আমি তাদের ওপর বেশ কিছু নিবন্ধ পড়েছি—তারা কারা, তারা কী পছন্দ করে বা করে না, তারা কী শব্দ ব্যবহার করে ইত্যাদি। আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ বা আবেগ এবং কাজের পরিধির জন্যও গত ১০ বছর আমি খুব কাছ থেকে তাদের দেখার সুযোগ পেয়েছি। কিছু বছর ধরে এই নতুন প্রজন্ম থেকে আমরা অনেক মেধাও কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দিয়েছি। খুব সোজাভাবে বলতে চাইলে জেন–জিরাই আজকের তরুণ।
তারুণ্যের একটি মাত্রা আমার কাছে সব সময়ই খুব স্পষ্ট—সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবে তারা সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকায় থেকেছে। ষাটের দশকে আমেরিকায় ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থেকে শুরু করে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে যুব আন্দোলন বা আরব বসন্তের অভ্যুত্থান—তরুণেরা সর্বদা সীমানা পেরিয়ে একটি উন্নত বিশ্বের দাবিতে অগ্রণী ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসও তরুণদের ত্যাগ ও অবদানে সমৃদ্ধ।
১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে আরোপ করায় ছাত্ররাই প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করেছিল এবং তাদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আমাদের মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতির এনে দিয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ছাত্র ও তরুণেরা পাকিস্তানের আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল।
কবি হেলাল হাফিজ তখন লিখেছিলেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”! ১৯৬৯–এর সেই আগুন থেকেই আসে ১৯৭১; আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়েও সরকার বা নীতি পরিবর্তনে তরুণেরাই সব সময় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
এখন ২০২৪–এর কথা যদি বলি, বাংলাদেশের তরুণেরাই এনেছে ৩৬ জুলাই। তরুণ বলি বা জেন–জি—বিপ্লব সব সময়ই তরুণদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। তবে আজকের জেন–জি এবং পূর্ববর্তী প্রজন্মের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা বর্তমানের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অতুলনীয় সংযোগ দ্বারা প্রভাবিত।
সমালোচকেরা সব সময় বলে এসেছে যে জেন–জি অধৈর্য, শর্টকাট খোঁজে, সামাজিকতার ভিন্ন সংজ্ঞায় চলে এবং তাদের নিজস্ব অদ্ভুত ভাষা আছে। খোলামনে যদি বলি, এই সমালোচনর পিছে আছে তাদেরকে বুঝতে না পারা, যা ইংরেজিতে বলে জেনারেশন গ্যাপ। এই গ্যাপের পেছনে সংগত কারণও আছে। জেন–জি জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠেছে এমন একটি বিশ্বে, যেখানে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন শুরু থেকেই তাদের জীবনের অংশ।
তাদের রয়েছে তথ্যের অভূতপূর্ব উৎস, যা তাদেরকে পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় আরও অনেক সচেতন করে তুলেছে—সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও প্রযুক্তিগতভাবে। ইন্টারনেট সংযোগ তাদের অনেক বেশি গতিশীল করে তুলেছ। তারা তাদের চিন্তাধারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবার মধ্যে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী সমমনা মানুষের সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা রাখে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্বপ্ন
- দেশের অগ্রযাত্রা
- জেন-জি