দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হলে কী সমস্যা

www.ajkerpatrika.com আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৯

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের পেছনে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ যে অনেকখানি দায়ী, সে বিষয়ে দ্বিমতের সুযোগ কম। কেননা এই অনুচ্ছেদ সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে এতটাই ক্ষমতাবান করেছে যে দৃশ্যত ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাঁহাকে প্রদত্ত ও তাঁহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন’ বলা হলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা।


বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ। উপরন্তু, অর্থাৎ একটানা হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য কোনো মেয়াদের সীমারেখা নেই; অর্থাৎ নির্বাচিত হলে তিনি আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন।


বস্তুত সংবিধানের এ ধারাগুলোই একজন সরকারপ্রধানকে একনায়ক ও স্বৈরাচারী হতে সহায়তা করে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রপতি পদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া তথা একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এমন বিধান যুক্ত করার দাবি আছে।


প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর প্রাক্কালে সংবিধানের যে ১২তম সংশোধনী আনা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এতটাই নিরঙ্কুশ করা হয় যে পুরো রাষ্ট্র ও সরকারকাঠামোয় রাষ্ট্রপতিকে মূলত একটি আলংকারিক পদে পরিণত করা হয়।


রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার বাইরে কোনো নীতি-নির্ধারণে আদতে তাঁর করার কিছুই নেই। অথচ ওই সময়ে যদি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রাখার একটি বিধান যুক্ত করা হতো, তাহলে পরবর্তীকালে দেশে যেসব রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তার অনেকগুলোই এড়ানো যেত বলে মনে করা হয়।



সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ বলছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁর অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। এই বিধান পড়ে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কেননা নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটিই স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতির পক্ষে এখানে অন্যথা করার সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি কে হবেন, কার্যত সেটিও রাষ্ট্রপতি ঠিক করেন না। কারণ প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটি নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার না হলেও এটি অনেক বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। উচ্চ আদালতের বিচারকেরা যে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান, সেটিও ওপেন সিক্রেট।


কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করা বা কারও সাজা মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে, সেখানেও তিনি স্বাধীন নন; বরং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই তিনি কাউকে ক্ষমা করেন।


জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেন, সেটিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতে হয়; অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগ তাঁকে যেরূপ কথা বলার অনুমতি দেবেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কেবল ততটুকুই বলবেন।


সাধারণ বিলের ব্যাপারে মতামত দিতে পারলেও অর্থবিলে রাষ্ট্রপতি কোনো ধরনের মতামত বা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করে সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না। সংসদ যা পাস করবে, রাষ্ট্রপতি তাতেই সই দিতে বাধ্য। এমনকি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করতে হলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হয়।


বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কারণে বিগত দিনে কোনো সংসদই সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানো, তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা এবং একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয়প্রধান না হওয়ার পথ বন্ধ করেনি। এ রকম বিধান থাকলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারতেন না। আর যখন কোনো ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ; তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বা সংসদ নেতাও হতে পারবেন না—তখন তাঁর মধ্যে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার মানসিকতা তৈরি হয় না। পদ্ধতিগত কারণেও তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছাচারী হওয়া সম্ভব নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও