তাঁদের জন্য কি কোনো মায়াদয়া লাগছে না

প্রথম আলো মনোজ দে প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৪, ২২:৩৫

চরম বৈষম্যপূর্ণ একটা দেশ হওয়ার একেবারে খাদের কিনারে দাঁড়ানো বাংলাদেশের মানুষদের প্রতিনিয়ত এত এত নির্দয় ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় যে সেগুলোর ব্যাখ্যা যৌক্তিক বোধেরও বাইরে।


এই যেমন ৬ জুন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল ট্রেনটির ঘটনার কথাই ধরা যাক। নরসিংদী স্টেশন থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে আসছিলেন ৪২ বছর বয়সী ঝুমুর কান্তি বাউল। ভিড়ের কারণে শেষ বগিতে উঠেছিলেন। গরমের কারণে খানিকটা স্বস্তি পাওয়ার আশায় জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। কিন্তু সেখানে আসনে থাকা যাত্রী মনজুর মিয়া তাঁকে সরে অন্যখানে দাঁড়াতে বলেন। দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। অন্য যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝুমুরকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন মনজুর মিয়া। মারের চোটে অচেতন হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।


বাস, ট্রেনের মতো গণপরিবহনে জানালা নিয়ে এ রকম বচসা নৈমিত্তিক ঘটনা। তাই বলে কারও গায়ে হাত তুলতে হবে! এমনভাবে পেটাতে হবে যে আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। যিনি এভাবে অন্যকে মারলেন, তাঁরও তো নিজের সন্তান আছে, ভাইবোন, অন্য স্বজন আছে। তাহলে এই নিষ্ঠুরতার ব্যাখ্যা কী?


এ ঘটনার তিন দিন পর ৯ জুন রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া বারিধারায় পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেন আরেক কনস্টেবল কাউসার আলী। তাঁরা দুজনেই ফিলিস্তিনি দূতাবাসে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বাইরে দাঁড়িয়ে কে কতক্ষণ দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। কাউসার চাকরিতে মনিরুলের চেয়ে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি চাইতেন মনিরুল তাঁকে সম্মান করুন। কিছুটা বেশি সময় বাইরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করুন। কিন্তু মনিরুল সে কথা শুনতেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে গুলি করেন কাউসার। মনিরুলের শরীরে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে।


পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়ে কথা–কাটাকাটি হতে পারেই। তাই বলে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করতে হবে? কাউসারের স্ত্রীর দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে তো সবার আগে প্রশ্ন চলে আসে, মানসিক সমস্যা আছে—এ রকম ব্যক্তি কীভাবে পুলিশের মতো এমন পেশাদার ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হতে পারেন? কীভাবে তাঁকে কূটনৈতিক জোনের মতো এমন সংবেদনশীল জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হলো?


শেষ করা যাক ঢাকার মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির উচ্ছেদ অভিযানের ঘটনাটি দিয়ে। ২০০ থেকে ২৫০ বছরের ওপরে এই জনগোষ্ঠী সেখানে বাস করে আসছেন। পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্রিটিশরা তাঁদের ঝাড়খন্ড থেকে নিয়ে এসেছিল। সে হিসাবে ঢাকায় মিউনিসিপ্যাল গড়ে ওঠার অনেক আগেই সেখানে বাস করছেন হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন। বর্ণবাদে বিভক্ত ভারতীয় হিন্দু সমাজের চার বর্ণেরও বাইরের অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী তাঁরা। আবার মুসলমান সমাজে বর্ণ বিভাজন না থাকলেও এই জনগোষ্ঠীর প্রতি অস্পৃশ্যতার একই দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো হয়। ফলে দোকানে চা খেতে চাইলেও তাঁদের নিজেদের কাপ-গ্লাস নিজেদেরই বহন করতে হয়। জীবিকা হিসেবে বংশানুক্রমিকভাবে পরিচ্ছন্নতার কাজই তাঁদের করতে হয়। অস্পৃশ্যতার অনড় বাধা পেরিয়ে এ জনগোষ্ঠীর দু-একজন সবে উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে অন্য কোনো পেশা বেছে নিতে পেরেছেন। পরিচয় জানলে অনেকে তাঁদের কাছে বাসাও ভাড়া দিতে চান না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও