বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না
প্রতিবছর নতুন নতুন আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন খাতে সরকার বাজেট পেশ করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। বড় অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করা হলেও সংশোধিত বাজেটে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। রাজস্ব আয় ৫ লাখ কোটি টাকা ধরা হলেও ২২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। মোদ্দা কথা, বাজেট যা করা হয়, তার যথাযথ বাস্তবায়ন কখনোই হয় না। আসলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী বছরের শুরু থেকে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সময়মতো অর্থছাড় এবং যথাযথ মনিটর করা হলে বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের একটি সংগঠন। এ প্রতিষ্ঠানে দেশের উচ্চপর্যায়ের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্লেষকরা দেশের অর্থনীতির সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেশের উন্নয়নে ও জনকল্যাণে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। প্রতিবছর সরকারের বাজেট ঘোষণার আগে অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট পেশ করে সরকারকে সহযোগিতা করে। অর্থনীতি সমিতি এবার যে বিকল্প বাজেট পেশ করেছে, তা কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ-উদ্ভূত বিপর্যয়কালীন বাজেট। অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট পেশের মূল লক্ষ্য আলোকিত মানুষসমৃদ্ধ বৈষম্যহীন শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনির্মাণ, যা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। তাই গতানুগতিক বাজেট পেশ না করে বাজেটের আয় ও ব্যয় খাতে কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করে অর্থনীতি সমিতি।
সমাজ থেকে প্রধানত চার ধরনের বৈষম্য নিরসন করা প্রয়োজন। এগুলো হলো আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করা। এটি করা হলে সমাজ থেকে শ্রেণিবৈষম্য দূর হওয়ার পাশাপাশি সুখী ও সমৃদ্ধ একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হলে বাজেটের আকার বড় করতে হবে। তাই অর্থনীতি সমিতি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ১.৫৭ শতাংশ বেশি। এতবড় আকারের বাজেটের টাকা কোথা থেকে আসবে, তার উৎস দেখিয়ে দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি। এ অর্থের সিংহভাগ সংগ্রহ হবে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে-১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা আসবে বন্ড বাজার, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব থেকে। বিকল্প এ বাজেটে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা যায়। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে একটা বিরাট অঙ্কের অর্থ চলে যায়, যা আমাদের মতো দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিরাট বোঝা। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্র্ট ও কল্যাণ রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়া। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে উল্লেখিত বিকল্প বাজেট সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।