কালোটাকা কালোই থাকে, সাদা করে কী লাভ!
কালোটাকা শুনলে কেমন জানি গা ছমছম করে! কালোটাকা কালোই থাকে। তা কখনো কি সাদা হয়? তা যতই ঘষামাজা করা হোক না কেন, তাতে বরং টাকা ছিঁড়ে যায়। ছিঁড়ে গেলে তো রিকশাওয়ালাও তা নিতে চান না! বনশ্রী থেকে আসছি কয় দিন আগে। রিকশা থেকে গন্তব্যে নামলাম। যুবক চালক কালো রং মাখা ময়লা ১০০ টাকা নিতেই চাইল না! ঘর্মাক্ত যুবক রাগত স্বরে চেঁচিয়ে উঠল।
- এইটা কী দিলেন স্যার? অচল মাল! শাপলা চত্বরের দোকানি টাকাওয়ালারাও নিব না। ফ্রেশ ট্যাহা দ্যান! আমনেরা শিকখিত মানহুস। কালো ট্যাহার কারবার করেন!
রিকশাচালকের কথা শুনে রীতিমতো ভড়কে গেলাম! কালোটাকা নিয়ে ওর উপলব্ধি যেন সমকালীন সামাজিক বাস্তবতা। কালোটাকা সেও পছন্দ করে না। অথচ আমরা দেশের অর্থনীতিতে ‘শিকখিত মানহুস’ দিনের পর দিন কালোটাকা ব্যবহার করে আসছি। একে সাদা করার আমাদের কী প্রাণান্তকর চেষ্টা!
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে এ উদ্যোগ। সরকারের কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।
বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ ও ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগও ছিল।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেন, যা ছিল দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ কালোটাকা সাদা করার ঘটনা। এসব বিনিয়োগ থেকে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এর পরের বছর কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে সাড়া না পাওয়ায় এ সুবিধা বাতিল করা হয়।
টাকা কি কখনো কালো হয়? টাকার নানা রকমের রং হতে পারে। তবে এটি সত্যি, পৃথিবীর কোথাও কালোটাকা নেই। কিন্তু কালোটাকার কথা আমাদের দেশে হরহামেশাই শোনা যায়। বাজেট এলে খুব বেশি আলোচনা হয় কালোটাকা নিয়ে। টাকাকে ‘কালো’ বলা হয় প্রতীকী অর্থে। অবৈধভাবে অর্জিত সব টাকাই কালোটাকা। আবার বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ যেটা কর দেওয়া প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়নি, সেটাও কালোটাকা। কালোটাকার পাহাড় গড়ে তোলে দুষ্কৃতকারী, কালোবাজারি, কর ফাঁকিবাজ ও আন্ডারগ্রাউন্ডের দুষ্ট লোকজন। মানব পাচারকারীরাও এর সঙ্গে যুক্ত। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য সম্পদ ও অর্থ কুক্ষিগত করা। তারা অর্থলোভী ও ‘কালোটাকার কালো মানুষ’। সোনার বাজার, গৃহায়ণশিল্প, টাকার লেনদেনে হুন্ডির আশ্রয় ও করমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কালোটাকার পাহাড় গড়ে ওঠে। পৃথিবীর অনেক দেশ একে ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ বলে।