বিত্তের সন্ধানে মগ্ন থেকে চিত্তের উৎকর্ষ হচ্ছে না

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩১

এখন জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা বিষয়ে দিবস পালিত হয়। মনে হচ্ছে, বছরের ৩৬৫ দিনের তুলনায় দিবসের সংখ্যা কিছু বেশিই হবে। এসব দিবসের মধ্যে কিছু কিছু আছে, যে দিবসগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে পালিত হয়। তবে বেশ কিছু দিবস আছে, যেগুলো সম্পর্কে আমরা সামাজিক গণমাধ্যম থেকে জানতে পারি। যেসব দিবস ব্যক্তি পরিবার ও সামাজিক জীবনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যময়, সেসব দিবস নিয়ে নানামুখী চিন্তাভাবনা সামাজিক গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হতে দেখি।


২৩ এপ্রিল ছিল বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস। এ দিবসটি উপলক্ষ্যে আমাদের দেশে কেউ কেউ বা কোনো কোনো গণমাধ্যম সময় উপযোগী চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বই সম্পর্কে বাংলাদেশের এক মনীষী বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন, হে প্রভু আমার হায়াত আরও কটা দিন বাড়িয়ে দাও, যাতে আমি আরও বই পড়তে পারি। জানি না, দেশে এখন এমন কোনো মনীষী আছেন কিনা, যিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো আরও অধিক বই পড়ার জন্য আয়ু বাড়িয়ে দিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। পৃথিবীর নামকরা সভ্যতাসমূহে গ্রন্থপাঠের বিশাল চর্চা হতো। মিসরীয় সভ্যতার অন্যতম অবদান আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। বাগদাদে বাইতুল হিকমায় জ্ঞানী-গুণীরা বই পড়তেন, জ্ঞানের নানা শাখার ওপর আলাপ-আলোচনা করতেন এবং জ্ঞানের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করতেন। চৈনিক সভ্যতায়ও অনেক প্রাচীন গ্রন্থের নিদর্শন পাওয়া যায়। চীনের দার্শনিকরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রিসেও জ্ঞানচর্চার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল এবং দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন গ্রিক পণ্ডিতরা। দেখা যায়, যেসব জাতি সভ্যতার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল তারা পাঠাভ্যাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিত। বই না পড়ে, জ্ঞানচর্চা না করে কোনো জাতি সভ্যতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারে না। এখনো আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো গ্রন্থ মজুতের দিক থেকে ঈর্ষণীয় অবস্থায় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাইবেরি অব কংগ্রেস, ব্রিটেনে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি ও ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি এবং ফ্রান্সে বিবিলিউথেক লাইব্রেরি কত সমৃদ্ধ, তা আমাদের কল্পনারও অতীত। রাশিয়াতে একই ধরনের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে। কিছু গ্রন্থাগার নিছকই গ্রন্থাগার। আবার কিছু গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের গ্রন্থাগারগুলো, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার বইয়ের মজুতের দিক থেকে মোটেও সমৃদ্ধ নয়। ঢাকায় জাতীয় গণ-গ্রন্থাগারে বইয়ের মজুত ২ লাখ ৭০ হাজার। এর পাশাপাশি নিয়মিত ১৩টি পত্রিকা ও কিছু বিদেশি সাময়িকী এ গ্রন্থাগারে রাখা হয়।


সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পর্যায়ক্রম চালু রয়েছে। নির্মাণ কাজ চলমান থাকতে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে শাহবাগ থেকে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থানগত কারণে পাঠক উপস্থিতিতে ভাটা পড়েছে। যদিও একটা সময় জাতীয় গণগ্রন্থাগারে বেশ ভালো উপস্থিতি ছিল। তবে উপস্থিতি থাকলেও সে সময়ও চাকরিপ্রত্যাশীদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। এ কথা জানা গেছে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের কর্মরত ব্যক্তি ও বর্তমান পাঠকদের কাছ থেকে। এ তথ্যগুলো পাওয়া গেছে ২৩ এপ্রিল ২০২৪-এর দৈনিক খবরের কাগজ থেকে। পাঠাগারে পাঠকরা কী ধরনের বই পড়ছেন তা থেকে বোঝা যায় পাঠকরা কতটা জ্ঞানসমৃদ্ধ হচ্ছেন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় গণগ্রন্থাগার যারা ব্যবহার করেন, তাদের বেশির ভাগই চাকরির পরীক্ষা, বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার গাইড বুক পড়ার জন্য ব্যবহার করেন। চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্ততিমূলক পড়াশোনা করা দোষের কিছু নয়। তবে এটাই যদি বেশিরভাগ পাঠকের চর্চা হয়, তাহলে প্রমাদ গুনতে হবে। রেফারেন্স বইতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা জাতির জন্য অশনিসংকেত! যান্ত্রিকভাবে গাইড বই পড়ে চাকরির পরীক্ষার বৈতরণী পার হওয়ার মধ্যে আশু সুবিধা অর্জনের লক্ষ্য ক্রিয়াশীল থাকলেও এ দিয়ে সুদূরপ্রসারী মহৎ কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। পাকিস্তান আমলে দেখেছি, যারা সিএসএস পরীক্ষা দিতেন তারা অনেক মৌলিক রেফারেন্স গ্রন্থ পাঠ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতেন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য এসব পরীক্ষার্থী রীতিমতো পিয়ার্স অ্যান্ড সাইক্লোপেডিয়া মুখস্থ করতেন। গভীর মনোনিবেশসহকারে পাঠ করেও অনেকে পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। আমাদের ধারণা আমলারা জ্ঞান-চর্চায় মনোযোগী নন। সব আমলার ব্যাপারে একথা বলা যায় না। প্রয়াত ড. আকবর আলি খান ডজনখানেক গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করে প্রমাণ করেছেন আমলাতন্ত্রের উচ্চপদে থাকার ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছিলেন না। আরও কয়েকজন আমলা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আকবর আলি খানের সমপর্যায়ের না হলেও কিছু কিছু মৌলিক গ্রন্থ রচনা করে তাদের প্রতিভা ও একাগ্রতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও