একাত্তরের ১৭ এপ্রিল : গুরুত্বপূর্ণ দিনটি আজো স্মরণীয়

জাগো নিউজ ২৪ ড. মিল্টন বিশ্বাস প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা সংকটের মধ্যে মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য অন্যরকম যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের প্রতিদিনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য লড়াই করছেন। এই লড়াইয়ে প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব কৌশল থাকলেও বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ প্রতিরোধের অনুসৃত রীতিনীতিগুলো একই এবং এখানে কোনো রাষ্ট্র কারো শত্রু নয়। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল একক; তা ছিল গণযুদ্ধ কারণ ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া গণহত্যা আমাদের ওপরই চালানো হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর নির্যাতন, অত্যাচার আর হত্যালীলার মধ্যে শত্রুকে মোকাবিলা করা আজকের অদৃশ্য শত্রুর চেয়েও কঠিন ছিল। এজন্য ১৯৭১ সালের দুর্যোগকালীন সরকারের দায়িত্ব ও যুদ্ধ পরিচালনায় তাঁদের প্রজ্ঞা আজকের মহামারি প্রতিরোধের অনুঘটক। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, বাংলাপিডিয়া, এইচ.টি ইমামের বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর প্রভৃতি গ্রন্থের সূত্রানুসারে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া (বর্তমান মেহেরপুর) জেলার বৈদ্যনাথতলায় এক আমবাগানে শপথ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবার পর মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয় ১৮ এপ্রিল। তার আগে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়টি ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও বাঙালির জীবনে দুর্যোগ মোকাবিলার অন্যতম মাইলফলক ঘটনা। ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন গণপরিষদের স্পিকার অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। তিনিই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। নতুন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।


১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রণীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিকাঙ্ক্ষী রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান। এই ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের প্রথম সরকার বা মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম লিখেছেন- ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এ তিনটি ঘটনা একসূত্রে গাঁথা।’ তাঁর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ‘তাজউদ্দীন আহমদ ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অধিবেশন আহ্বান করেন। ১০ এপ্রিলের ওই অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও পাক হানাদার বাহিনীকে স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত এবং নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের জন্য প্রথম সরকার গঠন করা হয়।’ সেসময় যিনি এই ঘোষণাপত্রটি রচনা করেছিলেন তাঁর স্মৃতিতে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র; যা ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধরত তেরটি মার্কিন উপনিবেশ নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় জুলাইয়ের ৪ তারিখ, যে তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়েছিল সেই তারিখেই। ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুসারে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কারণ ঘোষণাপত্রে লেখা হয়েছে- ‘আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।’


ঘোষণাপত্রের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অভিহিত করা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন করে আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় যে, শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। বর্ণিত ঘটনা অনুসারে আমরা জানি, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহবান করেও বেআইনিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা বন্ধ ঘোষণা করেন। উপরন্তু জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে গণহত্যা চালায়। উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখ-তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্রটি এখন সম্পূর্ণ আকারে বাংলাদেশের সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো রূপে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের সংবিধানের একটি অপরিবর্তনীয় বিধান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও